কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার নির্মাণাধীন প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (নিকলী-করিমগঞ্জ) সংযোগ সড়কের মধ্যস্থলে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ না করেই সমাপ্ত করতে যাচ্ছে সড়কের কাজ। দুর্গম হাওর জনপদে এ রাস্তা দিয়ে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের লোকজন কিশোরগঞ্জ জেলা সদরসহ করিমগঞ্জ, তাড়াইল এবং দেশের যেকোন উপজেলা ও জেলায় যাওয়াত করে থাকেন। হাওরজনপদের মানুষদের জন্য এ রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও জেলার বাইরের জনসাধারণ এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ, করিমগঞ্জ, মরিছখালী, গুনধরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরবাইকে করে দিন-রাত যাতায়াত করছেন।
এলাকাবাসী জানান, রাস্তার মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ না করেই জনগণের চলাচলের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে রাতেরবেলায় লোকজন চলাচলে মারাত্বক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
১৯৮৫ সালে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। তখন কাঁচা মাটির রাস্তা ছিল। হাওরে পল্লীবিদ্যুৎতায়ন শুরু হলে উপজেলার কারপাশা, বদলপুর, গৌরিপুর, শান্তিপুর, সহরমুল, জালালপুর ও নানশ্রী গ্রামে বিদ্যুতায়নের সময় রাস্তার পাশে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে এ সড়কটি পাকা করার ফলে প্রশস্ত করা হয়েছে আগেরছে দ্বিগুন। যার ফলে সহরমূল হতে কারপাশা পর্যন্ত বিদ্যুতের ৮টি খুঁটি রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায়। আর এভাবেই দায়সারা করেই রাস্তার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে যাচ্ছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাইরে থেকে যখন রাতের বেলায় অনিয়মিত গাড়িগুলো নিকলীতে আসে তখন এসব গাড়ি বিদ্যুতের খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অটোরিকশা, মোটরবাইক, ট্রলি ও মালবাহী গাড়িও দুর্ঘটনা থেকে বাদ যাচ্ছে না।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ করে জানান, এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ রাস্তায় তারা বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে যাওয়া-আসা করে থাকে। প্রায় ৭ মাস যাবত এ সড়কে গাড়ি যাতায়াত শুরু হলেও অদ্যাবধি এসব পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
নিকলী মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাহিনা, মজিবুর, নজরুল, শান্তা বলেন, আমরা যখন গাড়িতে করে কলেজে যাই তখন উৎকণ্ঠায় থাকি কোন সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমরা মৌখিকভাবে বিদ্যুতের দায়িত্বশীলদের বলেছি রাস্তা থেকে তাদের খুঁটিগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু তারা বিষয়টি কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না।
কারপাশা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ বারি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুতের খুঁটি না সরিয়ে আমি আজও (শনিবার) কাজ না করতে নিষেধ করেছি। কিন্ত তারা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে কার্পেটিংয়ের কাজ করছে এবং তারা বলছে এটি যেহেতু পল্লী বিদ্যুতের কাজ তাই অপসারণ তারাই করবে আমরা করতে যাবো কেন। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (নিকলী-করিমগঞ্জ) সংযোগ সড়কের মধ্যস্থলে ৮টি খুঁটি অপসারণ না করায় যাত্রীরা ঝুঁকিপুর্ণভাবে যাতায়াত করে থাকে। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা রাস্তার নিম্নমানের কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং বিদ্যুতের খুঁটি দ্রূত অপসারণের দাবী জানাচ্ছি।
নিকলী উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুর রহমান মুহিম বলেন, তারাপল্লীবিদ্যুৎকে খুটি সরাতে বলেছেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আমির হোসেন বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। রাস্তাটি নির্মাণের সময়ে পল্লী বিদ্যুৎকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা সরিয়ে নেয়নি ফলে আমরা কাজ বন্ধ না রেখে চলমান রাখি। রাস্তা থেকে এ সমস্ত খুঁটি সরিয়ে নেয়ার জন্য পল্লীবিদ্যুতকে লিখিতভাবে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ মনির উদ্দিন মজুমদার বলেন, রাস্তার মধ্যস্থল থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য এলজিইডির একটি চিঠি পাওয়ার পর নতুন খুঁটি নেওয়া হয়েছে। খুব শিঘ্রই কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।