১৯৯৭ সালের জুনে মরক্কোয় ‘ইসলামের দৃষ্টিতে সমসাময়িক চিকিৎসা সমস্যা’ শীর্ষক এক সেমিনার হয়। যার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কোন কোন চিকিৎসায় রোজার ক্ষতি হয় না। পরবর্তীতে যৌথভাবে জেদ্দার ইসলামিক ফিকাহ একাডেমি, মিসরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রিয়ায় অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অফিস এবং ইসলামিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের (ISESCO) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় নবম ফিকাহ-মেডিক্যাল সেমিনার। এতেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল কী কী উপায়ে ওষুধ সেবনে বা পরীক্ষা করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বসম্মতিক্রমে এমন কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেন যাতে অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপত্র নিলে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। উক্ত সেমিনারগুলোর আলোচনার বিষয়বস্তু বা ওই সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালেও প্রকাশিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া ওই সিদ্ধান্তগুলো হলো :
♦ রোজা রাখা অবস্থায় চোখ, কান ও নাকে ড্রপ নেওয়া যাবে।
♦ নাকে স্প্রে বা হাঁপানি রোগীর ইনহেলার জাতীয় কিছু নিলে কোনো সমস্যা নেই।
♦ বুকে ব্যথা হলে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে বা ট্যাবলেট জিহ্বার নিচে নেয়া যাবে।
♦ নারীদের তলপেটে পরীক্ষার জন্য যোনিপথ দিয়ে চিকিৎসক বা সেবিকার হাতের আঙুল বা কোনো ডিভাইস প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না। এমনকি চিকিৎসার জন্য যোনিপথে পেসারি বা কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে।
♦ জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টেরোস্কপি করা যাবে, এমনকি জরায়ুতে কোনো যন্ত্রপাতি বা অন্য কিছু পরীক্ষার জন্য প্রবেশ করালে রোজায় কোনো সমস্যা হবে না।
♦ রোগীর পায়ুপথে ইনজেকশন অথবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আঙুল বা অন্য কোনো যন্ত্র প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না।
♦ রোগীর চামড়া, মাংস, অস্থিসন্ধি ও শিরায় ইনজেকশন দেওয়া যাবে। কিন্তু স্যালাইন, ডেক্সট্রোজ, প্রোটিনজাতীয় ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
♦ কোনো রোগী অজ্ঞানকারী গ্যাস (এনেসথেসিয়া) নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
♦ চামড়ার মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যায় এমন মলম, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।
♦ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এন্ডোস্কপি করলে রোজা ভাঙবে না।
♦ মুখ পরিষ্কারের জন্য মাউথ ওয়াশ বা গড়গড়া বা মুখে স্প্রেজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে, তবে যেন পাকস্থলীতে কোনো কিছু না যায়।
♦ পাকস্থলী পরীক্ষার জন্য গ্যাস্ট্রোস্কপি করা যাবে, কিন্তু তরল প্রবেশ করানো যাবে না।
লেখক : সাবেক ডিন,
মেডিসিন অনুষদসাবেক চেয়ারম্যান, মেডিসিন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।