রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। শুক্রবার (১০ মে) দুপুর নাগাদ তার স্ত্রী রুনি জামান জানান, একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীর শারীরিক অবস্থা এখন খানিক স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে তারা একটু স্বস্তি পেতেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও সবুজ সংকেত পেয়েছে এটিএম পরিবার। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দুই একদিন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সফর থেকে দেশে ফিরবেন ১১ মে দুপুর নাগাদ। তিনি দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছেন রুনি জামান।
এদিকে এটিএম শামসুজ্জামানকে বিদেশে নিয়ে উন্নততর চিকিৎসা দেওয়ার অংশ হিসেবে আজ (১০ মে) দুপুরে আজগর আলী হাসপাতালে গিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডা. সামন্ত লাল সেন এর আগে সুবীর নন্দীর বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টিও সমন্বয় করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘উনাকে (এটিএম শামসুজ্জামান) বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি হাসপাতালে যাইনি! উনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই ১৯৮০ সাল থেকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আগেও একবার গিয়েছি দেখতে। আজও গেলাম।’
কিন্তু পরিবার থেকে জানা গেছে উন্নততর চিকিৎসার জন্য এই বরেণ্য অভিনেতাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। তারই অংশ হিসেবে আপনার আজকের হাসপাতাল সফর।
জবাবে ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আসলে পুরো নিশ্চিত নই। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশেও নেই। তবে আজ আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের লোক ছিলেন, এটা সত্যি। তারা দেখেছেন। আমিও তাদের সঙ্গে পুরো বিষয়টা নিয়ে আলাপ করেছি। প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলে তাকে নিশ্চয়ই অবহিত করা হবে। এরপর হয়তো বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
এই চিকিৎসক জানান, এটিএম শামসুজ্জামান এখনও লাইফ সাপোর্টেই আছেন। বললেন, ‘অবস্থা খারাপও না। আবার ভালোও না। বয়স হলে যা হওয়ার, তাই আরকি।’
এদিকে এটিএম শামসুজ্জামানকে বিদেশে নেওয়ার আদৌ প্রয়োজন আছে কি না। অথবা বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘এটা এমন একটা সেনসিটিভ ইস্যু, কিছু বলাটাও মুশকিলের বিষয়। তার ওপর আমি এই সাবজেক্টের ডাক্তারও না। তারপরেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে গিয়েছি। এখন দেশের বাইরে নিলে ভালো। আবার দেশের চিকিৎসাও যে খারাপ, তা নয়। কারণ এখন আমরাই অনেক উন্নত চিকিৎসা দিতে পারি। পার্থক্যটা হলো, বাইরের বিশেষ হাসপাতালগুলোতে নানাবিধ সুবিধা একটু বেশি। যেমন সুবীর নন্দীর বিষয়টা যেটা ছিল, উনার হার্টের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে অন্যান্য সাপোর্ট ছাড়া হার্টে হাত দেওয়ার সাহস হচ্ছিলো না দেশের চিকিৎসকদের। তাই দেশের বাইরে নেওয়া হলো। ওখানে গিয়ে ওরা তার হার্টে হাত দিয়েও বাঁচাতে পারলো না। সুতরাং বাইরে গেলেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে বিষয়টা তেমন না। বিষয়টা হলো ইমোশনের একটি বিষয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মানুষগুলোর প্রতি অনেক আন্তরিক। তিনি বরাবরই চান, সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাক তারা, সুস্থ হয়ে উঠুক।’
দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছেন এটিএম শামসুজ্জামান। কিংবদন্তি এ অভিনেতাকে ২৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই হাসপাতালে ২৭ এপ্রিল এই অভিনেতার শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে।
অস্ত্রোপচারের কারণ প্রসঙ্গে অভিনেতার ছেলের স্ত্রী রুবি জামান বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন উনার (এটিএম শামসুজ্জামান) পেটে খাবার জমা হয়ে শক্ত হয়ে যেত। চিকিৎসকরা বিষয়টি প্রথম দিকে ধরতে পারেননি। ২৬ এপ্রিল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা অসুস্থতার কারণটি ধরতে পারেন। তাই অস্ত্রোপচার করে এগুলো বের করা হয়েছে।’ এরপর ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
এটিএম শামসুজ্জামানের মেয়ে কোয়েল আহমেদ জানান, সে সময় নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত হন এ অভিনেতা।
৮৮ বছর বয়সী এ অভিনেতা অধ্যাপক ডা. রাকিব উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন ‘জলছবি’ ছবিতে। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথমদিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি।
অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য আজও তিনি দর্শকের কাছে নন্দিত।