কিশোরগঞ্জে চলন্তবাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
১২ মে (রবিবার) বিকেলে মামলার অগ্রগতির সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা পুলিশ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘এ ঘটনায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। ইতিমধ্যে মামলার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। মামলার মূল অভিযুক্ত বাস চালক নুরুজ্জামান নুরু ১৬৪ ধারায় সিজিএম কোর্টে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এর আগে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার বিলপাড় গজারিয়া নামক স্থানে চলন্তবাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব) রেজুয়ান দিপু উপস্থিত ছিলেন।
তারা ঘটনাস্থল বিলপাড় গজারিয়ায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী ভ্যানচালক জাকির হোসেনকে (১৯) ও চাউল ব্যবসায়ী মোশারফ, মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন ও সততা ফার্মেসীর মালিক হাবিবুর রহমান ও হাওয়া ফার্মেসীর মালিক খায়রুল ইসলামকে পিরিজপুর বাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
ভ্যানচালক জাকির হোসেন জানায়, সোমবার রাত ৮ টার দিকে চাউলের বস্তা নিয়ে কটিয়াদী থেকে গজারিয়া বাজারে যাচ্ছিলাম। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিলপাড় গজারিয়া নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস (স্বর্ণলতা) রাস্তার মাঝ খানে দাঁড়ানো। বাসের দরজার পাশে রাস্তার উপর আড়াআড়ি একটি মহিলাকে মূমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। আমি বাসের চালক ও সহযোগিকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে মেয়েটি গাড়ি থেকে লাফ দিয়েছে। আমি তাদেরকে মেয়েটির চিকিৎসার জন্য বললে তারা মেয়েটিকে আবার বাসে উঠিয়ে পিরিজপুরের দিকে নিয়ে যায়।
ডিআইজিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা পিরিজপুর বাজারের হাবিবুর রহমানের সততা ফার্মেসী ওষুধের দোকান পরিদর্শন করেন। হাবিবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, রাতে স্বর্ণলতা বাসের চালকসহ তিনজন ব্যক্তি অসুস্থ একটি মেয়েকে আমার দোকানে নিয়ে আসে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আমি তাদেরকে পার্শ্ববর্তী ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেই। বাসের চালক ও তার সহকারীরা অটোরিকশা খোঁজাখুজি করলেও কোন ড্রাইভার মেয়েটিকে চিলতে না পারায় তারা হাসপাতালে নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অগত্যা তারা মেয়েটিকে পুনরায় তাদের বাসে তুলে কটিয়াদীর দিকে চলে আসে।
উল্লেখ্য, গত ৬ মে রাতে কটিয়াদী উপজেলার বাহেরচর গ্রামের শাহিনুর আক্তার তানিয়া ঢাকা থেকে স্বর্ণলতা প্রাইভেট লিমিটেডের একটি বাসে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত অবস্থায় গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা মো. গিয়াসউদ্দিন বাদী হয়ে বাসের ডাইভার-হেলপারসহ মোট ৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে গ্রেফতার পাঁচ আসামি পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
আরো পড়ুন : কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্সকে গণধর্ষণ-হত্যা, ৫ জন রিমান্ডে