কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের নিরাপত্তায় অন্যান্য বাহিনীর মতো সর্বোচ্চ সতর্কবস্তায় থাকবে এলিটফোর্স র্যাব। ঈদের জামাতকে নির্বিঘ্ন করতে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় র্যাবের শতাধিক সদস্য সক্রিয় থাকবে। এদিকে এবারই প্রথমবারের মতো র্যাবের নিরাপত্তা বহরে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল।
শুক্রবার সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শনে এসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ এফতেখার উদ্দিন।
তিনি জানান, মাঠের চারপাশে ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। দূরবর্তী কোনো স্থানে যদি কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চোখে পড়ে সেক্ষেত্রে ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান নেয়া স্নাইপাররা স্নাইপিং রাইফেল দিয়ে ব্যাবস্থা নেবে। সবচেয়ে খারাপ ইনসিডেন্ট হতে পারে এমন ধারণা মাথায় নিয়েই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হুমকি মনে করছেন না বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. এম শোভন খান, এএসপি মো. জসিম উদ্দিনসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহে জেলা পুলিশের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, জঙ্গি হামলার আশঙ্কা না থাকলেও এবার শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে বাড়তি চার স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ভিতরে বিক্ষিপ্ত কিছু বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এ কারণেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার জানান, এ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঈদগাহকে কেন্দ্র করে ৩২টি চেকপোস্ট, ১৭টি পিকেট (নির্ধারিত স্থানে বসে দায়িত্বপালন) ও রোড ডিউটি থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্যে প্রত্যেক মুসল্লিকে তিনটি স্তর পার করে দেহ তল্লাশির মধ্য দিয়ে মাঠে প্রবেশ করানো হবে।
এছাড়া মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে, বোম্ব ডিসপোজাল টিম থাকবে এবং মাইন মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ঈদগাহ সুইপিং করা হবে। পুলিশের চারটি ও র্যাবের দু’টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ভিডিও ক্যামেরা ও সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি ওপেন সার্কিট ক্যামেরা অর্থাৎ ড্রোন দিয়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, ঈদের দিন এক হাজার ২০০ পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, ১০০ র্যাব সদস্য থাকবেন নিরাপত্তায়। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের দিন মুসল্লিদের কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় ব্রিফিংয়ে।
অপরদিকে, যাতায়াতে ট্রেন সুবিধার পাশাপাশি মুসল্লিদের সব ধরনের সেবা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদী তীরে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে এবার অনুষ্ঠিত হবে ১৯২তম ঈদুল ফিতরের জামাত। এতে ইমামতি করবেন বালাদেশ ইসলাহুণ মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
জামাতকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ঈদগাহ ময়দানে চলছে নিরাপত্তা চৌকি, ওয়াচওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, দেয়াল-স্থাপনা এবং গাছ-গাছালিতে রং ও চুন দিয়ে সাজানোর কাজ। একইসঙ্গে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঈদগাহস্থল পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন ও মহড়া ইত্যাদি কার্যক্রম।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, ঈদগাহ জামাতকে মুসল্লিবান্ধব করতে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি মুসল্লিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্য, এক এলাকাবাসী ও এক হামলাকারী নিহত হয়।