তামাকের কারণে প্রতিবছর পৃথিবীতে ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। তার মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানে বছরে ৯ লাখ মানুষ মারা যায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকের ভয়াবহতা ব্যাপক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের গবেষণা মতে, বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাক সেবনের কারণে ১২ লাখ মানুষ ৮টি প্রাণঘাতি অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করে। টোব্যাকো এটলাস শিরোনামে আন্তর্জাতিক এক প্রকাশনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়।
তামাকের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করে বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘তামাকের ধোঁয়া যে বিষাক্ত, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া নারী, শিশু’সহ অধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ধোঁয়া তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। এজন্য পরোক্ষ ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর সহায়তায় মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর তামাকের প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন- দু’টোই ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী নেশা। পরোক্ষ ধূমপানও অধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাক সেবনের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস, ক্রনিক লাং ডিজিজ’সহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ দেখা দেয়। প্রাণঘাতী এসব রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার এবং ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগ যেমন: অ্যাজমা, হাঁপানি, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পলমনারি ডিজিজ) ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ বছর দিবসটির স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তামাকে হয় ফুসফুস ক্ষয়: সুস্বাস্থ্য কাম্য, তামাক নয়।’
তিনি বলেন, ‘ধূমপান মাদক সেবনের প্রবেশ পথ। তামাক সেবনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত হয়ে পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যমসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে শামিল হতে হবে।’
প্রতিবছরের ন্যায় সরকার এ বছরও বর্ণাঢ্য কলেবরে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন করবে জানিয়ে বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘প্রতিবছর ৩১ মে তারিখে দিবসটি উদযাপিত হলেও এ বছর অনিবার্য কারণবশতঃ উদযাপনের তারিখ পিছিয়ে ২০ জুন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত, সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সম্মাননা প্রদান করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান, যুগ্ম সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তা ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।