ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘ভিডিও করা কি ওসির কাজ? মেয়েটিকে এ ধরনের প্রশ্নেরও কোনো প্রাসঙ্গিকতা দেখি না। আমাদের দেশের কিছু ওসি নিজেদের জমিদার মনে করেন। সবার কথা বলছি না, কিছু কিছু ওসি-ডিসি মনে করেন তারাই অল ইন অল। আমাদের দেশে এগুলো বেশি হয়।’
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আহসানউল্লাহ ও সালমা সুলতানা। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানিতে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী আদালতকে বলেন, এটি একটি ভিত্তিহীন মামলা। এছাড়া দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সে ভিডিও করেছে। তার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। সে একজন বয়স্ক, হার্টের রোগী ও তার কানে সমস্যা। তার কান খারাপ। কানে কম শোনে।
তখন আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, কানে কম শুনলে তিনি ওসি পদে থাকেন কি করে?
আইনজীবী বলেন, বয়স শেষের দিকে। পেনশনে চলে যাবে।
আইনজীবী আরো বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমের মোবাইল থেকে ভিডিওটি সজল নামের এক সাংবাদিকের হাতে চলে গেছে। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা। তখন আদালত বলেন, যে আশঙ্কা করছেন, ওটা সাংবাদিকদের হাতে গেলে প্রকাশ পেত, সবাই সচেতন হয়ে গেলে মেয়েটিকে আর মরতে হত না।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, তিনি সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (মোয়াজ্জেম) হয়েও মেয়েটির বক্তব্য ভিডিও করলো, তা ভাইরাল করলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কি মেসেজ যাবে? সে অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তিনি আরো বলেন, পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করেছে তা শোনা যায় (অশ্লীল ভাষা) না! তখন আদালত বলেন, কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদেরকে জমিদার মনে করেন। সবাই কিন্তু না। কিছু কিছু ওসি তারা নিজেদেরকে অল ইন অল (নিজেই সব) মনে করেন। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি।
অ্যাটর্নি জেনারেল প্রশ্ন রেখে বলেন, এগুলো কী প্রাসঙ্গিক যেসব প্রশ্ন মেয়েটিকে করেছে। আদালত বলেন, এ ধরনের প্রশ্নের কোনো প্রসঙ্গ দেখি না। ওসি কি এভাবে প্রশ্ন করতে পারে? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, না পারে না। বলতে পারতো অভিযোগটা লিখে আনো। এসব প্রশ্ন করবে, ভিডিও করবে, ভিডিও ভাইরাল করে আবার মজা করবে, এভাবে মজা করার কী সুযোগ আছে? কতটা দায়িত্বহীন। আদালত এ সময় বলেন, তখন যদি মেয়েটাকে প্রটেকশন দিত তাহলে তাকে মরতে হত না।
এরপর মোয়াজ্জেমের আইনজীবী আবারও দাঁড়ালে আদালত তাকে বলেন, এগুলো কী হয়? কেন এসব জিজ্ঞেস করেছে। অভিযোগ লিখে আনতে বলতে পারতো। তা না করে ভিডিও করে তা আবার ভাইরাল করেছে। ওসি কি এগুলো কী করতে পারে? জবাবে ওসির আইনজীবী বলেন, পারে। আদালত এ সময় বলেন, সে প্রশ্ন করে সব শেষ করে দিলে আদালত কী করবে? আদালতের কাজ কী? এই আদালতে এত পড়ে শোনানোর দরকার নেই, ওই আদালতে (নিম্ন আদালতে) পড়ে শুনিয়েন। আমরা জামিন দেব না। এ সময় ওসির আইনজীবী বলেন, পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। আদালত বলেন, এটা পুলিশ নয়, একজন ব্যক্তি জড়িত। পরে জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন আদালত।