বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
এ বিষয়ে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শাজাহান হোসেন বলেন, মিন্নি এ মামলার ১ নম্বর সাক্ষী হলেও জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে মিন্নির সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিফাত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিন্নির কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। এজন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নি মানসিকভাবে অসুস্থ। এটা জানিয়েই আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু জামিন না মঞ্জুর করে তার রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় বরগুনা জেলা পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তাকে গ্রেফতারের কথা জানান বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
মারুফ হোসেন বলন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার পর বাসা থেকে মিন্নিকে নিয়ে আসে পুলিশ। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়া হয়।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা মিন্নির শ্বশুর আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে সে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছেলে হত্যার বিষয়ে কিছু কথা শেয়ার করার জন্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি এবং সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতায় রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত এ পর্যন্ত ১৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে আমাকে বলতে হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। কীভাবে তারা বাইরে তা বলার জন্যই আমি আজ এখানে এসেছি।
দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি মিন্নি ও তার পরিবার সুকৌশলে গোপন করেছে। নয়ন বন্ডের স্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার ছেলে রিফাতকে বিয়ে করেছে মিন্নি। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া-আসা করতো। নিয়মিতভাবে নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করতো সে।
পরদিন রোববার শ্বশুরের এ বক্তব্যকে বানোয়াট উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলন করেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। লিখিত বক্তব্যে মিন্নি বলেন, বর্তমানে আমার শ্বশুর অসুস্থ এবং তিনি তার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি যখন যা বলেন তা কোনো কিছুই পরে মনে থাকে না। আসামিরা বিচারকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করেছে। তারা আমার ছবি এডিট করে নয়ন বন্ডের সঙ্গে যুক্ত করে পোস্ট করেছে। ০০৭ নামের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটি যারা সৃষ্টি করেছে তারা খুবই ক্ষমতাবান এবং বিত্তবান। তারা এ বিচারের আওতা থেকে দূরে থাকার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে রিফাত হত্যার বিচারকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার শ্বশুরকে সংবাদ সম্মেলন করাতে বাধ্য করেছেন। শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে আমার শ্বশুর আপনাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট।