মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ কবে কখন শুরু হয়েছিলো শিক্ষার দোকানদারী? ব্যক্তিমালিকানাধীন ফ্যাক্টরি হয়, ব্যাংক হয়, শিল্প-কারখানা হয়। যেমনি ব্যক্তি-মালিকানায় আকাশ হয় না, সাগর হয় না, নদীকে ব্যক্তি মালিকানাধীন করা যায়না, তেমনি শিক্ষা জ্ঞান গবেষণাকেও মালিকানাভুক্ত করা যায় না। আকাশ সাগর নদী যেমন সার্বজনীন, শিক্ষা জ্ঞান গবেষণাও তেমনি সার্বজনীন।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তমাখা সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা হয়েছে “রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন একমুখী বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করবে”। সংবিধানসংযুক্ত এ ঘোষণা এখনো আর্তনাদ করছে। তবে আশার কথা হলো,”Existing education policy has a trend towards Article 17 but struggling against the difficult barriers inside govt”.
বর্তমানে সার্বজনীন তো নয়ই, একমুখীও নয়, বরং শিক্ষা নিয়ে ভয়াবহ বাণিজ্য শুরু হয়েছে।মালিকানাধীনশিক্ষা,মালিকানাধীন জ্ঞান গবেষণার শপিং মল চালু হয়েছে। ব্যাংক বীমা মিল কারখানার চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান, এমডি, জিএম,একজিকিউটিভ,পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, ক্যাশিয়ার থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এগুলো বেমানান।
কিন্তু চালু হয়েছে।
চিকিৎসা বিদ্যা, প্রকৌশল বিদ্যা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। এই মেডিকেল কলেজের মালিক কে? ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক কে? হ্যা, মালিক আছে। শিক্ষা এখন মালিকানাধীন পণ্য। দেখলাম, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীগণ তাদের বুকে ফেস্টুন লাগিয়েছে, ‘শিক্ষা পণ্য নয়’। এ কথা কি শিক্ষার দোকানে পড়ুয়া কেউ বলতে পারে? ওগুলো তো দোকান। আপনি জেনেশুনেই তো ঐ দোকানে গেছেন। ওখানে শিক্ষা মানেই পণ্য। কোন শপিংমলে কিংবা বাজারে, কোন দোকানে যে কোন পণ্য কিনতে গেলে কমবেশি bargain করার সুযোগ থাকে। ব্যক্তি মালিকানার বিশ্ববিদ্যালয়েও তাই হয়। পণ্যসামগ্রী ‘ইংলিশ অনার্স’ কিংবা ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’ যেটিই কিনেন, ‘নর্থ-সাউথে’ দাম একরকম আর ‘প্রাইমে’ দাম আরেকরকম। শিক্ষার্থীগণ এখানে ক্রেতা, মালিকরা বিক্রেতা। শিল্পের মালিক মুনাফার জন্যই বসেছেন।
প্রফিট করবেন তো ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হবেই। সরকারকে শক্তভাবে শিক্ষার সওদাগরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ সওদাগরগণ বিশাল অংকের টিউশন ফি এবং নামে বেনামে বিভিন্ন ফি ধার্য করে বসবেন, এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের উচিৎ। বঙ্গবন্ধু এ খাতগুলো সরকারের হাতে রেখেছিলেন। শিক্ষাখাত স্বাস্থ্যখাত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে ছিলো। বঙ্গবন্ধু সরকারের পর তথাকথিত মুক্তবাজারের নামে এসেবা খাতগুলো আশির দশকে ছেড়ে দেয়া হয় অশিক্ষিত লুটেরা ধনিকশ্রেণির হাতে। এরা মুনাফা ছাড়া কিছু জানেনা। পাষাণ কসাই’র মতো ফি ধার্য করে।
সরকারকে সাধুবাদ জানাবে জনগণ, শিক্ষার্থীদের ফি(বেতন ও অন্যান্য ফি) যদি বৃদ্ধি না হয়। জ্ঞান ও শিক্ষার লেবাস(সাইনবোর্ড) লাগিয়ে চটকদার চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা কাস্টমার(শিক্ষার্থী) খুঁজে বেড়ায় সেই রক্তচোষা বিকৃত বুর্জোয়া গোষ্ঠীকে ঠেকাতে হবে। লাগামহীন মুনাফাখোর শিক্ষার সওদাগরদের লোলুপ জিহ্বা কেটে দিতে পারলে সরকারের সাথে আমরা অভিভাবকরা থাকবো।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/১৩-১২-২০১৫ইং/নিঝুম