কিশোরগঞ্জে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলাবাসী। কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব অনুযায়ী, কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫জন স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় সনাক্ত হওয়া ২১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে বাকি ২০৬ জনের প্রায় সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে জেলাপ্রশাসন, কিশোরগঞ্জ এর আয়োজনে সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা কারাগার, কিশোরগঞ্জ কর্তৃক সরবরাহকৃত মেশিন দিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিশেরগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে মশার ঔষধ ছিটানো হচ্ছে।
দেশব্যাপী মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে র্যালি, আলোচনা সভা ও
পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সচেনতামূলক লিফলেট
বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন এডিসি জেনারেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ।
তিনি জানান জেলা প্রশাসনের নিজস্ব মেশিনে অন্য এলাকায়ও ঔষধ ছিটানো হবে। এতে সকলের
সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জেলার হাসপাতালগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে ভীড়
বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীদের। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পরিস্থিতি
সামাল দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গত দুইদিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ জন রোগী নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের
মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এছাড়া অন্তত ৩০ জনকে জরুরি অবস্থায় ঢাকায় রেফার্ড
করা হয়েছে। জেলার ৫টি হাসপাতালে মোট ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৩৯ জন, বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯জন, করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন এবং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
তবে জেলার হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল এই পাঁচটি উপজেলা এবং
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কেউ সনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার আইসোলেশন ওয়ার্ডের দুইটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ড, চার তলার শিশু ওয়ার্ড এবং ষষ্ঠ তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিশোরগঞ্জে স্থানীয়ভাবে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বোতোভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. সুলতানা রাজিয়া জানান, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগিদের প্রায় সবাই ঢাকায় গিয়ে ডেঙ্ধসঢ়;গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীর চাপ থাকায় হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্ধসঢ়;গু ওয়ার্ড খোলাসহ পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনালের হাসপাতালের রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে
ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বেশিরভাগ রোগী ঢাকা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে যুবক-তরুণের সংখ্যাই বেশি। তারা হয় ঢাকায় বসবাস করেন অথবা পড়শোনা ও পারিবারিক কাজে ঢাকায় অবস্থান করেছেন।