হাশিম আমলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠতম ব্যাটসম্যানদের একজন। ছিলেন আধুনিক ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি, ধর্মপ্রাণ, বিনয়ী ও দৃঢ় ব্যাটিংয়ের প্রতীক। গতক ১৫ বছর ধরে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে শক্ত হাতে শাসন করেছেন সমকালীন ব্যাটসম্যানদের। অবশেষে সেই শাসকের যুগাবসান হলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন হাশিম আমলা। আমলার বিদায়ে তার সমকালীন ক্রিকেটাররা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এই কিংবদন্তিকে।
আমলার শেষ অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস বলেছেন, ‘হাশিম আমলা ছিল দ্য মাইটি। আমাদের দলের ফাদার ফিগার ছিল। এত জ্ঞান, এত বিনয় এবং সবসময় তার মুখে ছিল হাসি। আমি যতদূর মনে করতে পারি, সে সবসময়ই ব্যাটিং লাইনআপে পাহাড়ের মতো নিশ্চল ছিল। কিংবদন্তিতুল্য এই ক্যারিয়ার ছিল অসাধারণ। তোমাকে ধন্যবাদ। আমরা তোমাকে মিস করব।’
আমলার দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবি ডি ভিলিয়ার্স লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ার হাশিম আমলার। শুরুতে তোমাকে নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করেছিল। কিন্তু তোমার লড়াকু চেতনা, বিনয় ও অবিশ্বাস্য প্রতিভা দিয়ে তুমি পাহাড়ের শীর্ষে উঠেছিলে। শেষ পর্যন্ত তুমি বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন এবং আমার দেখা সেরা। এমন ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন।’
কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘তুমি তোমার দলকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে সবসময় চেষ্টা করেছ এবং অনেক তরুণের জন্য প্রেরণা হয়েছ। অবসর জীবন যেন অসাধারণ হয়, সেই প্রার্থনা রইল।’
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি দিয়ে আমলা জানিয়ে দেন, তিনি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না। ২০১৯ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচই হয়ে রইল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আসন্ন এমজানসি সুপার লিগে পাওয়া যাবে তাকে।
২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তার। ২০০৮ সালে ওয়ানডে ও ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল হাশিম আমলার। আর সর্বশেষ ইনিংসটি খেলেছেন তিনি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৯ উইকেটে পাওয়া এই জয়ের পথে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ২০৩ রান করতে পেরেছেন তিনি। শেষটা খুব সুখকর না হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক রেকর্ড সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন আমলা।
তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৭টি সেঞ্চুরি করেছেন; যা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ। মজার ব্যাপার হলো, আমলার ২৭টি সেঞ্চুরির মধ্যে ২৪টিতেই দল জিতেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি এখনও দ্রুততম ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ হাজার রান করার কীর্তির মালিক। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪৬ গড়ে ৮,১১৩ রান নিয়ে অবসরে গেলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটেও সমান রঙ্গীন ছিলেন আমলা। ২৮টি সেঞ্চুরিসহ ৪৬.৬৪ গড়ে এই ফরম্যাটে ৯,২৮২ রান করেছেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন। সবমিলিয়ে দেশটির পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান নিয়ে অবসরে গেলেন; সর্বোচ্চ রান জ্যাক ক্যালিসের।
সংক্ষিপ্ত অধিনায়কত্ব জীবনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিরল সিরিজ জয় এনে দিয়েছিলেন দলকে। ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন এবং ২০১৩ সালে এই পুরস্কার আবার পান তিনি।
এই বর্ণময় ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে পাঠানো বিবৃতিতে আমলা বলেছেন, ‘প্রথমত প্রোটিয়াদের হয়ে আমাকে এই সফর করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তার জন্য। প্রোটিয়াদের হয়ে খেলাটা ছিল এক আনন্দ ও প্রাপ্তি। আমার এই চলার পথে আমি অনেক কিছু শিখেছি, অনেক বন্ধু তৈরি করেছি এবং ভাতৃত্বের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার পিতামাতাকে তাদের প্রার্থনার জন্য, ভালোবাসার জন্য ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাই। প্রোটিয়া সূর্যের থেকে রক্ষা করতে তারাই ছিলেন বছরের পর বছর আমার ছাতা হয়ে। সেই সাথে আমার পরিবার, বন্ধু ও এজেন্টদের এবং আমার সতীর্থদের এবং সকল সাপোর্ট স্টাফকে ধন্যবাদ জানাই এই অসাধারণ একটা সফরের জন্য। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’