বরগুনার আমতলী উপজেলার কলাগাছিয়া গ্রামের গৃহবধূ সেবিকা রাণী (১৯) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করছে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে। থানায় মামলা দায়ের। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে।
জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের নিকুঞ্জ চন্দ্র শীলের পুত্র ইন্দ্রজিত চন্দ্র শীলের সাথে আমতলী উপজেলার তাতিপাড়া গ্রামের মৃতঃ হরেন্দ্র চন্দ্র শীলের মেয়ে সেবিকা রাণীর সাথে গত ১৬ মাস পূর্বে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। সে সময় সেবিকার পরিবার ইন্দ্রজিতকে স্বর্ণের চেইন, মেয়ে সেবিকাকে ৩ ভড়ি স্বর্ণ, ষ্টীলের আলমিরা, আসবাবপত্রসহ ৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেয়া হয়। বিয়ের পূর্বে ইন্দ্রজিতের পরিবার সেবিকা রাণীর পরিবারকে বলেছিল ইন্দ্রজিত ঢাকায় চাকুরী করে। বিয়ের পর স্ত্রী সেবিকা রাণী জানতে পারে তার স্বামী কোন চাকুরী করে না বেকার। বাবা- মায়ের সাথে বাড়ীতেই থাকে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও দুই পরিবারের মধ্যে মনোমানিল্য চলে আসছে। এরপর থেকে ইন্দ্রজিত প্রায়ই স্ত্রী সেবিকাকে বাপের বাড়ী থেকে ব্যবসা করার জন্য টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে কিন্তু সেবিকা তাতে রাজি হয় না। ঘটনার দিন (শুক্রবার) রাত ৮ টার দিকে ইন্দ্রজিত মাছ ধরার জন্য পার্শ্ববর্তী নদীতে যায়। মাছ ধরে রাত ১ টার দিকে বাড়ীতে ফিরে এসে দরজা খোলার জন্য স্ত্রী সেবিকা রাণীকে ডাকাডাকি করে। স্ত্রী দরজা না খোলায় ইন্দ্রজিতের বাবা নিকুঞ্জ শীল ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়। ঘরে ডুকে ইন্দ্রজিত বসত ঘরের দোতালায় উঠে
চিৎকার দেয়। এ সময় ছেলের চিৎকার শুনে ইন্দ্রজিতের বাবা-মা দোতালায় গিয়ে দেখতে পায় ঘরের আড়ার সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাদের পুত্রবধূ সেবিকা রাণীর লাশ ঝুলে আছে। এ সময় তাদের ডাক চিৎকারে পার্শ্ববর্তী ঘরের লোকজন জড়ো হয়ে ঘটনা দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
শনিবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে আমতলী থানায় নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে আমতলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বামী ইন্দ্রজিত চন্দ্র শীল মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার স্ত্রী কেন যে আত্মহত্যা করলো আমি এর কোন কারন খুজে পাইনা। আমি নদীতে মাছ ধরে বাড়ী ফিরে এসে দেখি সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করছে।
সেবিকা রাণী মা পুস্প রাণী কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি আমার মেয়েকে ফোন দিলে মেয়ে আমাকে জানায় সে অসুস্থ্য পরে কথা বলবে বলে ফোনের লাইন কেঁটে দেয়। শনিবার সকালে জামাই ইন্দ্রজিত ফোন দিয়ে আমাকে জানায় সেবিকা খুব অসুস্থ্য তাড়াতাড়ি চলে আসেন। জামাই বাড়ীতে এসে দেখি আমার মেয়ের লাশ। যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে ওর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পরিকল্পিতভাবে মেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরে টানিয়ে রেখেছে। আমি এর বিচার চাই।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে পাঠিয়েছে।