দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটাকে তাদের টেলিকম লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সরকারের দুই প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া আদায় করতে না পেরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিটিআরসি ওই দুই অপারেটরের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে ‘কারণ দর্শাও’নোটিস পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিরীক্ষা দাবি অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ না করায় লাইসেন্স বাতিলে ওই দুই অপারেটরের কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১-এর ৪৬(২) ধারা অনুযায়ী গ্রামীণফোন ও রবির টুজি ও থ্রিজি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সরকারের পাওনা আদায়ে গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিস ইস্যু করতে বিটিআরসিকে অনুমতি দেয়। এরপরই বিটিআরসি ওই দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রামীণফোন ও রবির প্রতিনিধি বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাওনা পরিশোধের বিষয়টি মীমাংসা করতে আরও সময় চায়। তবে বিটিআরসি অপারেটর দুটির আবেদন খারিজ করে গতকাল লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিটিআরসির নোটিসটি অযৌক্তিক এবং একই সঙ্গে একটি বিতর্কিত নিরীক্ষা দাবির বিষয়ে আমাদের গঠনমূলক সমাধান প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের অনীহার আরেকটি বহির্প্রকাশ। নোটিসটি পর্যালোচনা করার পরেই গ্রামীণফোন উত্তর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান, শেয়ারহোল্ডার ও সম্মানিত গ্রাহকদের অধিকার রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্যায্য যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন অ্যাক্ট, ২০০১-এর ৪৬ ধারা অনুযায়ী বিটিআরসি যে নোটিস পাঠিয়েছে, তাতে যৌক্তিক কারণে কমিশনকে লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিতের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অপারেটরদের দেওয়া লাইসেন্সের শর্ত ও বিধিবিধান ভঙ্গ হলে এমন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে কমিশন।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টেলিকম অ্যাক্টের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ১৩ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে কমিশন কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে। এতে অপারেটরদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বিটিআরসি।
যন্ত্রপাতি আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার কাছে সরকারের পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ও রবি আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি বকেয়া রয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যন্ত্রপাতি আমদানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনা ও এর সুদ মিলিয়ে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা দাবি করে গত ২ এপ্রিল চিঠি পাঠায় বিটিআরসি।
তবে বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করায় গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ৩০ শতাংশ ও রবির ১৫ শতাংশ ব্যান্ডইউথ কমিয়ে দেয় বিটিআরসি। এই নির্দেশনা কার্যকরের পর থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নানা সমস্যায় পড়েন। গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ায় গত ১৭ জুলাই ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অপারেটর দুটিকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এতে করে অপারেটর দুটির নতুন প্যাকেজ অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও বকেয়া আদায়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় চলতি মাসে গ্রামীণফোন ও রবির বিদ্যমান প্যাকেজ নবায়ন না করার প্রস্তাব সংক্রান্ত একটি উদ্যোগের অনুমোদন চেয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি।