কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে মিজানুর রহমান (২৫) নামে যৌতুক লোভী এক পাষণ্ড স্বামী নববধূর গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া ঢেলে নির্যাতনের ভয়ঙ্কর এক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে ওই গৃহবধূর শ্বশুর বাড়িতে এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বজনরা নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে রাতে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ওই গৃহবধূ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নির্যাতিত গৃহবধূর নাম লাইলী আক্তার (২০)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কচুরী গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের মেয়ে। অন্যদিকে পাষণ্ড স্বামী মিজানুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় বাকচান্দা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী।
জানা যায়, মাত্র চার মাস আগে লাইলী আক্তারের সঙ্গে মিজানুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন যেতে না যেতেই মোটা অংকের যৌতুকের টাকার জন্য লাইলীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। বাবা হারা লাইলীর সুখের জন্য স্বামী মিজানের হাতে তিন দফায় লাখ টাকা তুলে দেন লাইলীর দরিদ্র ভাই আলামিন।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্যাতিত গৃহবধূ লাইলী আক্তার জানান, যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তার স্বামী মিজান ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে তাকে মারধর শুরু করে। মারধরের পর তাকে শিকলে বেঁধে রাখে। এক পর্যায়ে গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া ঢেলে দেয়। এতে যন্ত্রণায় তিনি ছটফট ও চিৎকার করলেও তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এমনকি তার বাবার বাড়িতে খবরও দিতে দেয়নি।
নির্যাতিত গৃহবধূ লাইলী আক্তারের বড় ভাই আল আমিন জানান, তিনি রাজধানীর মিরপুরে ফেরি করে মাছ বিক্রি করেন। তার বোন লাইলীও মিরপুরের একটি গার্মেন্টে কাজ করত। মাস ছয়েক আগে রং নম্বরে মিজানের সঙ্গে লাইলীর পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ পরিস্থিতিতে গত রোজার ঈদের একদিন পর মিজানের সঙ্গে লাইলী পালিয়ে যায়। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে মাত্র সাড়ে চার মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মিজান যৌতুকের জন্য লাইলীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। বাবা বেঁচে না থাকায় বোনের সুখের জন্য তিনি তিন দফায় মিজানকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপরও তার বোনের ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি। দিনের পর দিন মোটা অংকের যৌতুকের জন্য মিজান নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
শুক্রবার দুপুরে লাইলীর শ্বশুরবাড়ির এলাকার এক লোক মোবাইল করে মিজান তার বোনের গোপনাঙ্গে মরিচের গুঁড়া ঢেলে নির্যাতন করেছে জানালে তিনি তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিকালে লাইলীকে শ্বশুর বাড়ি থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে লাইলীর অবস্থার অবনতি দেখে রাতে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।
হোসেনপুর থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, গৃহবধূর ভাই আলামিন বাদী হয়ে শনিবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।