একটি ছোট্ট নতুন ঘর, নতুন আসবাবপত্র। মাথার ওপর ঘুরছে ফ্যান, জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন সেই স্বপ্নের আবাস! এ সময় মাকে কোলে করে নতুন ঘরে প্রবেশ করছেন ছেলে।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার দক্ষিণ সাহেদল গ্রামের নবী হোসেনের স্ত্রী ৯০ বছরের বৃদ্ধা সমলা বেগমের কাছে এমনটা স্বপ্ন ছাড়া আর কি-বা হতে পারে? তবে এমন স্বপ্নই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
মানবিক এক পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগে অবশেষে গোয়ালঘর থেকে নতুন ঘরে ঠাঁই পেয়েছেন তিনি।
চার ছেলে থাকার পরও বৃদ্ধ মাকে রাখা হচ্ছিল আলো-বাতাসহীন একটি গোয়াল ঘরে গরুর সঙ্গে। বিষয়টি জানার পর হোসেনপুর সার্কেলের এএসপি মো. সোনাহর আলীর উদ্যোগে অসহায় সেই মায়ের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন ঘর। শনিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘরটি বুঝিয়ে দেয়া হয় সমলার খাতুনের কাছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি অভিযোগের সূত্র ধরে বিষয়টি জানতে পারেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। অভিযোগ দেখে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী সেই মাকে দেখতে হোসেনপুর থানার ওসি শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিসার ফোর্সসহ ওইদিন বিকালেই ছুটে যান উপজেলার সাহেদল গ্রামে। তিনি স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে সমলা খাতুনকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেন। সমলা খাতুনের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় ছেলে ইমান উদ্দিনের ব্যবসায়ী ছেলে ওমর ফারুক।
এছাড়া চার ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন দশ দিনের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন। কিন্তু ছেলেদের নতুন ঘর নির্মাণ করা নিয়ে সংশয় থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী নিজেই পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেন এই দুখিনী মায়ের থাকার জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার।
বিষয়টি জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। বৃদ্ধা সমলা খাতুনের জন্য নতুন ঘর নির্মাণে তিনি দেন আর্থিক সহায়তা। হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী এবং ওসি শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়াও সহযোগিতার হাত বাড়ান জেলা পরিষদ সদস্য মাসুদ আলম। সবমিলিয়ে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সমলা খাতুনের জন্য নির্মাণ করা হয় একটি সুন্দর-পরিপাটি ঘর।
এছাড়াও খবর পেয়ে তাকে দেখতে যান হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন। ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা সমলা খাতুনের হাতে ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন সেদিন তুলে দেন বয়স্ক ভাতার বই ও কিছু নগদ অর্থ।
এরপর গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সমলা বেগমের খোঁজখবর নিতে আবারও উপজেলার সাহেদল গ্রামে যান হোসেনপুরের ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন। ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন সাথে নিয়ে যান তার মা তাহেরা খাতুনকে। মা-ছেলে মিলে নেন সমলা খাতুনের ভাল-মন্দের খোঁজখবর। বয়সের ভারে ন্যুজ সমলা খাতুনের চলাফেরার জন্য তখন ইউএনও’র উদ্যোগে দেয়া হয় একটি হুইল চেয়ার।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে সেই ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে সমলা খাতুনকে হস্তান্তর করতে সাহেদল গ্রামে যান হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী এবং ওসি শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানে জেলা পরিষদ সদস্য মাসুদ আলমসহ সমলা খাতুনকে নিয়ে তারা ফিতা কেটে ঘরটির উদ্বোধন করেন। পরে সেই ঘরে তুলে দেয়া হয় সমলা খাতুনকে।
হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে বলেন, সমলা খাতুনের মতো একজন অসহায় মায়ের মুখে হাসি ফিরেছে এটিই আমাদের পরম পাওয়া। পুলিশের পক্ষ থেকে এই মায়ের জন্য নতুন ঘর তৈরি করে দিতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত। ছেলেরাও তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত। এখন তারাও তাদের সাধ্যমতো তাদের মা-র পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন।