রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মাদক ও কিশোর গ্যাং বর্তমান সময়ে দেশের জন্য বড় সমস্যা। তবে মাদক নির্মূল ও কিশোর গ্যাং দমনের দায়িত্ব শুধুমাত্র আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার নয়। এ সমস্যা সকলের, তাই সমাধানের দায়িত্বও সবাইকে নিতে হবে। এ ব্যাপারে আইনজীবীসহ সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে তাঁর সম্মানে আয়োজিত গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবর্ধনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি আইনজীবীদের জন্য ১০ তলা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, প্রতি জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মাত্র একটি এবং এই আদালত মামলার ভারে ভারাক্রান্ত। কিশোরগঞ্জ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতেই মামলার সংখ্যা ৪৩ হাজার। এর ফলে বিচার সম্পন্ন হতে অনেক সময় লাগছে এবং বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সারা দেশেই এই পরিস্থিতি বিরাজমান। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রতি উপজেলায় একজন সহকারী জজ নিয়োগ দিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা প্রয়োজন।
বিচার প্রার্থীদের হয়রানী না করার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু অর্থকে প্রাধান্য দিলে বিচার প্রার্থীদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আগের সংসদ গুলিতে আইনজীবীদের প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৭০ সালের সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা ছিল ৫১ভাগ। আমার সময়ে অষ্টম সংসদে ছিল মাত্র ৩৩জন। এখন হয়ত তা আরও কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বলেন, দেশের প্রচলিত জলাধার আইনে যেখানে নিজের পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ, সেখানে অর্থের লোভে নিজের পুকুর তো বটেই সরকারী পুকুরও জবর-দখল করে ভরাট করে ফেলছে। এর ফলে আগুন নিভানোর পানি পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে প্রশাসন, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সমাজের সবাইকে ভুমিকা পালন করতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মোঃ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গনে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সায়েদুর রহমান খান এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহীদুল আলম শহীদ।
সংবর্ধনা সভা শেষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আইনজীবীদের জন্য ১০ তলা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। পরে তিনি কিশোরগঞ্জের শ্যাম সুন্দর জিউর আখড়া পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে মতবিণিময় করেন।
উল্লেখ্য, সাতদিনের সফরে গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ আগমন করেন। ১৫ই অক্টোবর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে তিনি কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন।