ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কাউন্সিলর দফতরের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘সপ্তম পার্সিয়ান ভাষা উন্নয়ন কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে একথা বলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বাংলা ভাষা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উৎসস্থল। একুশের আত্মদান এই মর্যাদায় আমাদের উন্নীত করেছে। বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সে কারণে পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার প্রতি আমাদের সম্মান অব্যাহত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভাইজি দেহনাভী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুস সবুর খান এবং সঞ্চালন করেন বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে ইরান কালচারাল দফতরের প্রতিনিধি, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সী বিভাগের কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য তার উদ্বোধনী বক্তব্যের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে এই ভাষা কোর্সের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য এবং কোর্স অব্যাহত রাখায় ইরান দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান।
দূতাবাসের বর্তমান রাষ্ট্রদূতকে উপাচার্য একাডেমিক কার্যক্রমে তার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য অধ্যাপক আব্বাস ভাইজি সম্বোধন করেন।
উপাচার্য বলেন, আমাদের এই এশিয়া অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিশ্বময় তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এই কাজ শুরু করতে হবে আমাদের নিজেদের পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে। আজকের পৃথিবীর বিশ্ব-পল্লীতে যোগাযোগ রক্ষা করতে গেলে বহু ভাষা অর্জনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। বিশ্ব পল্লীতে ইংরেজি ফ্রান্সের প্রভাবে এই অঞ্চলের ভাষার ভারসাম্যতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা যৌথভাবে শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে বিশ্ব আগ্রহী হয়ে উঠবে।
আমাদের নিজেদের যোগাযোগ সীমিত। এদেশের ছাত্র-শিক্ষকগণ ইউরোপ, আমেরিকা সম্পর্কে যত জানে, ইরান সম্পর্কে ততটা জানে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজকের প্রশিক্ষণ কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। ফারসি ভাষা এই অঞ্চলে এক সময় সরকারি ভাষা ছিল, যে কারণে বাংলা ভাষায় ফারসি ভাষার প্রভাব রয়েছে। ফারসি ভাষা ও বাংলা ভাষার দুটি ধারা সংযুক্ত হলে সারা পৃথিবীতে এর প্রভাব পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা বলা হয়।
উপাচার্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এবং ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ও শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র বুদ্ধিজীবীদের ওপর পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সেদিন নজিরবিহীন গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে গত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে।
সেদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু বিভাগ থাকবে কি-না, আমাদের জবাব ছিল উর্দু ভাষা ও সাহিত্য মানবীয় সভ্যতার অংশ। কোন ভাষার প্রতি আমাদের বিদ্বেষ নেই। এই ভাষা চর্চা, শিক্ষা ও গবেষণা যাতে আরও উন্নত করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।
উপাচার্য বলেন, ফারসি ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা। এদেশে এই ভাষার চর্চা ইরানের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন, ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের, সাহিত্য-সংস্কৃতির ভাব-বিনিময় এবং বিদ্যায়তনিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে।