বরগুনার পাথরঘাটা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী চাঞ্চল্যকর সেতু হত্যা মামলায় প্রধান আসামী পাথরঘাটা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক ছোট্টকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা জরিমানা এবং বাকি তিন আসামী বেকসুর খালাশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২৩ আক্টোবর) দুপুরে বরগুনা নারী ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যূনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় প্রদান করেন। মামলার আসামীরা হলো, প্রধান আসামী জিয়াউল হক ছোট্ট তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা লাকি, আবদুল্লাহ আল মামুন কাজী ও আনিচুর রহমান রেজবি খান। তাদের সকলের বাড়ি পাথরঘাটা পৌর এলাকায়।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ জুন আসামীরা কামরুন্নাহার সেতুকে (১৭) নিমর্ম নির্যাতন করে মৃতু নিশ্চিত করে বিষ খাইয়ে হত্যা করে আসামীরা। পরদিন ৩০ জুন সেতুর বড় ভাই নজরুল ইসলাম রিপন বাদি হয়ে পাথরঘাটা থানায় মামলা করেন। সেতু তখন পাথরঘাটা কলেজের ২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কলেজে সেতু মেধাবী ও ভাল ক্রীড়াবিদ হিসেবে সুনাম ছিল বলে জানান পাথরঘাটা কলেজের অধ্যক্ষ মো.জাহাঙ্গির আলম।
দীর্ঘদিন সাত বছর মামলা চলার পরে চাঞ্চল্যকর সেতু হত্যা রায় দেয়া হয়। আসামীর পক্ষের কৌশুলী ছিলেন অ্যাড. কমল কান্তি দাশ ও সরকার পক্ষের বিশেষ পিপি মো.মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৯ জুন শুক্রবার রাত ৯টার দিকে পাথরঘাটা পৌর সভার উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক ছোট্টর বাসায় গিয়ে কামরুন্নাহার সেতু (১৭) স্ত্রীর অধিকার দাবি করেন, নিজেকে অন্তঃস্বত্¦া বলেও জানান। তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায় জিয়াউল হক ছোট্ট ও তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা লাকীসহ ৪ থেকে ৫জন মিলে জোর পুর্বক বিষ খাইয়ে দিয়ে ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। ওই সময় সেতু তার মা হোসনে আরা পাখিকে মোবাইলে বলেছে ছোট্টসহ ৪ থেকে ৫ জনে মিলে তাকে বিষ খাইয়ে দিয়ে ঘর বের করে দিয়েছে। ঘটনার সময় সেতুর কান্নাকাটি শুনে স্থানীয় লোকজন উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত দুইটার দিকে সেতুর মৃত্যূ হয়। দীর্ঘ ৭ বছরের মাথায় এসে চাঞ্চল্যকর সেতু হত্যা মামলার রায় হলো।
খালাশ প্রাপ্ত আসামী আবদুল্লাহ আল মামুন ও আনিসুর রহমান রেজবি খান বলেন, ঘটনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক না থাকলেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদেরকে অহেতুক মামলায় জড়ানো হয়েছিল। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।
আসামীর পক্ষের কৌশুলী অ্যাড. কমল কান্তি দাশ জানান, প্রধান আসামী আদালতে অনুপস্থিত ছিল। নির্দোষ প্রমানিত হওয়ায় ৪ জন আসামীর মধ্যে ৩জনকে খালাস প্রদান করেন আদালত । ধর্ষণ ও হত্যা মামলা রুজু হলেও আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে হত্যার অভিযোগ প্রমানিত হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচারের জন্য যাব।