মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ কিডনি ফাউন্ডেশনের ১১তম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে বর্তমানে ২ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত রয়েছে।
তারা বলেন, প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার লোক এ রোগে মারা যাচ্ছে। তারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে এ রোগের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।
আজ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে দুইদিনব্যাপি এ সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদের সভাপতিত্বে মিরপুরস্থ হাসপাতাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কিডনি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনি ফেরদৌস রশিদ ।
দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি রোগ ও প্রতিরোধ, হেমোডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন প্রভৃতি নিয়ে সেমিনারে আলোচনা করেন। এতে দেশের প্রায় ৩ শতাধিক চিকিৎসক অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশের দুই কোটি লোক উচ্চরক্তচাপে এবং ৮০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৪০ থেকে ৬০ ভাগ এবং উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তদের ৫০ থেকে ৬০ ভাগই জানেন না যে তাদের এসব রোগ হয়েছে।
তারা জানান যাদের উচ্চরক্তচাপ ধরা পড়েছে অথচ নিয়ন্ত্রনে নেই তাদের ১৫ থেকে ২০ ভাগ এবং যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে নেই তাদের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্রমান্বয়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় । বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও ২০ থেকে ২৫ ভাগের একুইট কিডনি ফেইলর ধরা পড়ে। সবমিলিয়ে দেশে দুই কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। এতে বছরে মারা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মতো মানুষ।
বক্তারা বলেন, কিডনি রোগে চিকিৎসা ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যয়বহুল এবং তা মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ বহন করতে পারে। ৭৫ শতাংশ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। অথচ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রেখে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত চিকিৎসা নিলে, এসব বিষয়ে জনসাধারনকে সচেতন করা গেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ অনেকাংশেই সম্ভব।
অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান কিডনি রোগ প্রতিরোধে সারাদেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহনের আহবান জানিয়ে বলেন, যারা যে জেলায় বসবাস করেন সেখান থেকেই সচেতনতামূলক মানবিক কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে। কেননা কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।
বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করলে নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ হবার আগে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- প্রথম দিকে এর কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু যখন উপসর্গ ধরা পড়ে ততক্ষণে কিডনির প্রায় ৭৫ ভাগই বিকল হয়ে পড়ে।
তিনি জানান, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করলে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ন নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ হবার আগে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি এই রোগ প্রতিরোধে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাটা, অতিরিক্ত লবন পরিত্যাগ, ফাস্টফুড, চর্বি জাতীয় ও ভেজাল খাবারসহ ধুমপান বর্জন করার পরামর্শ দেন।
– বাসস।