কিশোরগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস। যেখানে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না। পিয়ন-দারোয়ান থেকে শুরু করে প্রধান কর্মকর্তা পর্যন্ত ঘুষের টাকা লেনদেনের বিষয়টি অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। আর ঘুষ না দিলে অন্তহীন ভোগান্তি।
কোন কাজের জন্য কোন টেবিলে কত টাকা দিতে হয়, তাও সবার মুখে মুখে। শুধু তাই নয়, কোন কর্মকর্তা ‘ঘুষখোর’, কোন কর্মকর্তা কীভাবে কোন ফাঁদে ফেলে পার্সপোট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে ঘুষ নেন- সেটিও কারও কাছে অজানা নয়। তাছাড়া শারীরিক লাঞ্ছনাসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো হয় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। যে কাজে আবার ব্যবহার করা হয় স্থানীয় দালালদের।
দালাল নির্ভর এ অফিসটিতে প্রত্যেক দালালের জন্য আলাদা আলাদা করে আদ্যাক্ষর দিয়ে সংকেত দেয়া হয় ফাইলে। দিন শেষে ফাইল হিসেব করে টাকা দিতে হয় অফিসকে। এমন অসংখ্য অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আবেদন ফরমে সব ঠিক থাকার পরও নানা ছুতোয় টাকা চেয়ে বসেন অফিসের কর্মকর্তারা। আবার পুলিশি যাচাই-বাছাইয়ের নাম করেও নেওয়া হয় আলাদা টাকা। এভাবেই চলছে পাসপোর্ট অফিসটি। জেলা প্রশাসনসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
সাম্প্রতি পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলে নানা ভুল আবিষ্কার করে হয়রানি করা হয়। আর দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করলে এসব ঝামেলা পোহাতে হয় না। এসব কাজে স্থানীয় দালালদের লাগানো হয়। সবশেষ চ্যানেলের মাধ্যমে না গেলে আবেদন ফাইল স্বাক্ষর হয় না। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা বাধ্য হন দালাল ও চ্যানেল ধরতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফিসটিতে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের তীর পাসপোর্ট অফিসটির অফিস সহকারী মামুন সিরাজুল হকের দিকে। তিনি বিভিন্ন ভাবে চ্যানেল ফি’র নামে প্রত্যেকটি ফাইল থেকে ১২০০ টাকা করে হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করতে গেলে পাল্টা হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর করা হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে টাকা ছাড়া সেবা অচল। পাসপোর্ট অফিসের সামনেই প্রকাশ্যে দালালরা পাসপোর্টের কাজ করেছেন। সাধারণ কোনো মানুষ দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিতে গেলে ভুল হয়েছে বাহানায় ফেরত দেয়া হয়। ফরম পূরণ থেকে জমা দেয়া ও পাসপোর্ট গ্রহণ সবই করেন দালালরা। সত্যায়ন-পুলিশ ভেরিফিকেশন, আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই এবং তথ্যের সঠিকতা নিরূপণে সত্যায়িত করার কাজটিও করছেন তারাই। ফলে দালাল ছাড়া সাধারণ আবেদন প্রার্থীরা যেন বড়ই অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিস স্টাফ জানান, পত্রিকায় লিখে কোনো লাভ নেই। আপনার মতো অনেক সাংবাদিক এখানে আসে। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। সবই দালাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। মাঝে মধ্যে পুলিশ-র্যাব এসে দালালদের দৌড়ায়। কিন্তু পরক্ষণে যেই-সেই অবস্থা।
এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিসের কাজে-কর্মে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, পাসপোর্ট নিয়ে অল্পদিনে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।