হিরো আলমের মতো আর কেউ যেন জন্ম না হয়। আমারমতো নুসরাত যেন আর কষ্ট না পায়। আমি বিচার চাই।
আজ বুধবার কেঁদে কেঁদে গনমাধ্যকর্মীদের কাছে কথাগুলো বলছিলেন হিরো আলমের দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, একাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে হিরো আলমের। প্রতিবাদ করায় প্রথম স্ত্রীর মতো আমাকেও মারধর করেছে। হিরো আলম নিজেকে হেভিওয়েট মনে করে। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতারা নাকি ওর কথায় ওঠে আর বসে। আমি নাকি কোথাও বিচার পাবোনা। থানায় অভিযোগ বা মামলা দিয়ে কোনো লাভ হবেনা বলেও হুমকি দিচ্ছে। মুকুল নেত্রবাদী নামের এক পরিচালক ফোন করে হিরো আলমকে ডিভোর্স দেয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে।
গত রবিবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসায় দ্বিতীয় নুসরাতকে বেধরক মারপিটের ঘটনায় হিরো আলমের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় জিডি (নং ৮১৬, তারিখ ১০/১১/১৯ইং) করেছে নির্যাতনের শিকার মডেল অভিনেত্রী নুসরাত জাহান।
মাঝেমধ্যেই মারধর করে এমন অভিযোগ এনে তিনি জানান, বিয়ের খবর গোপন রেখে ঢাকায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছিল হিরো আলম। প্রায় এক বছরের সংসার। বিয়ের খবর প্রকাশ পেলে জনপ্রিয়তা নষ্ট হবে, এই কথা বলে নুসরাতকে ভুলিয়ে রাখে। তবে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানতো হিরো আলমের প্রথম স্ত্রী সাদিয়া আক্তার সুমিসহ পরিবারের সবাই। প্রথম স্ত্রীর মৌখিক সম্মতিতেই দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়। প্রথম স্ত্রী সুমি এবং হিরো আলমের সাথে নুসরাতের মুঠোফোনে কথা বলার বেশকয়েকটি ফোন রেকর্ডও গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে দিয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত। হিরো আলমকে একাধিক বিয়ে এবং নারীদের জীবন নিয়ে খেলার নেপথ্যে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার মানবাধিকার চেয়ারম্যান পরিচয়ধারী আতিকুর রহমান, হিরো আলমের দুলাভাই (দ্বিতীয় বিয়ের স্বাক্ষী) আব্দুল মালেক, পরাণ মিয়া সহ বেশকয়েকজন রয়েছে। এদেরও বিচার চাইলেন নুসরাত জাহান।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, ডিশ ব্যবসায়ী থেকে তারকা বনে যাওয়া হিরো আলমের সাথে প্রায় একবছরপূর্বে কুড়িগ্রামের নুসরাত জাহানের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর থেকেই ঢাকায় গোপনে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছিল হিরো আলম। গত ৬ মার্চ যৌতুকের দাবিতে প্রথম স্ত্রী সাদিয়া আক্তার সুমিকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল হিরো আলম। পরে ৭ মার্চ বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আহমেদ শাহরিয়ার তারিক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। হিরো আলমের স্ত্রী সুমিকে মারধরের অভিযোগে ৬ মার্চ বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন তাঁর (হিরো আলম) শ্বশুর সাইফুল ইসলাম। ২০০৮ সালে সুমি বেগমের সঙ্গে হিরো আলমের বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জানান, আমার সাথে বিয়ে হবার আগে থেকে হিরো আলমের প্রথম স্ত্রী সুমি আমাকে বলতো, আলমের নারী আসক্তি বেশি। একাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর কথায় কান দিতো না হিরো আলম। সুমি আমাকে বলতো, আলম তোমাকে পছন্দ করে, তুমি ওর জীবনে এসে আলমকে সুপথে নিয়ে এসো। আমার সন্তানদের মুখের দিকে তাকাও, আলম সুপথে না আসলে সন্তানদের কি হবে! অনেক নারীর জীবনও নষ্ট করবে। আমি সুমিকে বোন ডাকতাম। হিরো আলম আমাকে বিয়ে করার জন্য কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, হাসপাতালেও ভর্তি ছিল। ওর প্রথম স্ত্রী আর সন্তানদের কথা ভেবেই আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। এখন হিরো আলম বলে বেড়াচ্ছে, আমি নাকি ওর স্ত্রীই না ! কাবিননামা কি মিথ্যা ? বসুন্ধরার বাসায় আমার সাথে সংসার করছে, এটাও কি মিথ্যা ? ওর এতো জনপ্রিয়তা যে, আমাকে বিয়ে করেছে জানলে জনতার কাছে তাঁর সম্মান যাবে ! আমি থানায় জিডি করেছি, মামলাও করবো। আর যেন আমারমতো নুসরাত কষ্ট না পায়। হিরো আলমের বিচার চাই। ওর নেপথ্যে থেকে যাঁরা একাধিক বিয়ে বিয়ে খেলছে, ওদের বিরুদ্ধেও মামলা করবো।
এবিষয়ে জানতে হিরো আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
এ প্রসঙ্গে ভাটারা থানার উপপরিদর্শক কেএম জিয়াউল আলম মুঠোফোনে জানান, দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহানকে মারধরের ঘটনায় হিরো আলমের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছে। তদন্তভার আমার ওপর রয়েছে। তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। নুসরাত জাহান হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।