দাম বাড়ার পর একটি পেঁয়াজের দাম কত হতে পারে? দশ টাকা। বিশ টাকা। না, আপনার ধারণা ঠিক নয়। যারা নিয়মিত বাজার-সদাই করেন, তারা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারেন। একটি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা।
শুক্রবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর বাজার থেকে এমনি একটি পেঁয়াজ কিনেছেন ডিম-পুরি ব্যবসায়ী আলী আহাম্মদ।
আলী আহাম্মদ জানান, দুপুরে সরারচর বাজারে পেঁয়াজ কিনতে যান তিনি। তখন পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২৪০ টাকা হওয়ায় দোকান থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি পেঁয়াজ কিনেন। যার মূল্য ৬০ টাকা।
দুপুরে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, বুধবার পাইকারি আড়তগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। দাম বেড়ে ১৯০ টাকা হয় বৃহস্পতিবার। শুক্রবার খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি আড়তগুলো থেকে মণ প্রতি ৪০০-৬০০ টাকা বেশি দরে কেনেন পেঁয়াজ। এরপর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে দামের তারতম্য অনেক বেশি ছিল।
ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছে দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদিন পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০-৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে আবারো ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।
এরপর হুট করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলে বসেন পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এ বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি আরও উসকে দেয়। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। এর পরের দিনই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা পৌঁছে।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা। বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরও বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তা আরও বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।
পেঁয়াজের এমন দামের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেন, পেঁয়াজের দাম মূলত সরকারের দুই মন্ত্রীই বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা পেঁয়াজের দাম কমার পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলে দাম আকাশচুম্বি করেছেন। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি ঘটেনি যে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা হয়ে যাবে। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, পেঁয়াজের দাম নিম্ম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজারে তদারকি করা হচ্ছে।
কেউ কেউ অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে বলে তিনি শুনেছেন। দাম কমাতে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করবেন বলে জানান তিনি।