মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কজন ব্লগার লেখককে হত্যার ঘটনায় এমন অনেক লেখক এখন জীবনের ভয়ে ভীত।
নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা জানা না গেলেও, ব্লগার কমিউনিটি এবং কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে যে, জীবন সংশয়ের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে গত কয়েকবছরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিক পশ্চিমা কয়েকটি দূতাবাসে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
কয়েকজন এর মধ্যেই ইউরোপের কয়েকটি দেশে চলেও গেছেন।
এরই মধ্যে ইসলামী উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে থাকা বাংলাদেশি লেখকদের জরুরি আশ্রয় দেওয়ার জন্য গতকাল (মঙ্গলবার) যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
কিন্তু হুমকির মুখে দেশ ছাড়া উচিৎ কি উচিৎ নয়, তা নিয়ে এসব ব্লগার লেখকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
আমেরিকাতে আশ্রয়ের এই সাত বছর ধরেই অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের লেখালেখি করেন, যার মধ্যে ধর্মীয় বিষয়ও রয়েছে, এমন একজন বলছিলেন, নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এখন তিনি দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্লগার বলেন, ২০১৩ সালে যখন রাজীব হায়দারকে হত্যা এবং তারপর চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তারের পর থেকে তার মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়।
“সারাক্ষণ চাপাতির আতংক নিয়ে তো আর বেঁচে থাকা যায় না।”
তবে ব্লগার লেখকদের অনেকে আবার দেশ ছেড়ে যাওয়ারও পক্ষপাতী নন। তাদেরই একজন আরিফ জেবতিক।
তিনি বলছেন, বাংলাদেশের লেখক ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার যে আহ্বান আমেরিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, তা এখন এদেশের ভিন্নমতের লেখকদের জন্য খুবই দরকার।
তবে এ ধরণের বিদেশে আশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হলে তা অপব্যবহারেরও কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন মি. জেবতিক।
“আমার উপরও হুমকি রয়েছে। কিন্তু আমি দেশ ছাড়তে আগ্রহী নই। জীবন বিপন্ন হলেও আমি চেষ্টা করবো দেশের ভেতর টিকে থাকতে। কারণ আমরা তরুণরাই হচ্ছি এই মুহূর্তের প্রগতিশীল বাংলাদেশ এবং ধর্মান্ধ বাংলাদেশের বিভেদ রেখা। এই দেশটা যাতে মৌলবাদী এবং ধর্মান্ধদের খপ্পরে না পড়ে যায়, আমাদের সেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
পালিয়ে যাওয়া সমাধান নয়: ইনু
অনেক লেখক ব্লগার অভিযোগ করেছেন যে, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে অসন্তুষ্ট করতে চায় না বলেই এ ধরণের অপরাধীদের ধরতে সরকার ততটা উদ্যোগী নয়।
বিভিন্ন সময় দেয়া বক্তব্যে সরকারের কর্মকর্তারা ব্লগারদের তাদের লেখালেখিতে সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেও যথাযথ নিরাপত্তা পাওয়া যায়না বলে তাদের অভিযোগ, আর তাই অন্য দেশে আশ্রয় নেয়াটাই তাদের কাছে সহজ সমাধান।
তবে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছেন, দেশ ছেড়ে যাওয়া কোন সমাধান নয়, বরং এখানে থেকেই এই সমস্যার মোকাবেলা করা দরকার।
“সরকার বাক স্বাধীনতায় কাউকে বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু সমাজের ভিতর কিছু উগ্র জঙ্গিবাদী ব্যক্তিরা, তারা তাদের অপছন্দের ব্যক্তির উপর হামলা করছে। সেটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই ঘটছে। কিন্তু তাতে তো ভীত হলে চলবে না। সরকার তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, গ্রেপ্তার করছে, তদন্ত করছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।”
তিনি বলছেন, এটা জঙ্গিবাদীদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয় না। বরং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা দরকার।
বাংলাদেশে ব্লগিংয়ে লেখালেখির কারণে হুমকি এবং হামলার ঘটনা ২০১৩ সাল থেকে ঘটতে শুরু করে। এ পর্যন্ত এ ধরণের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছে। এর শুধুমাত্র দুইটি ঘটনায় অভিযোগ পত্র দেয়া হয়েছে।