হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের চিহ্ন সংবলিত টুপি কোথা থেকে এসেছে তার রহস্য অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে কারা কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও। যদিও বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও কারা বিভাগের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে দুই ধরনের বক্তব্য। এদিকে যে টুপি নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা সেটিই এখন হাওয়া হয়ে গেছে।
গতকাল আদালতে রিগ্যানের মাথায় টুপি দেখা গেলেও, কারাগারে নেওয়ার পর তার কাছে সেটি আর পাওয়া যায়নি। টুপিটি কোথায় গেছে তা নিয়েও মুখ খোলেনি জঙ্গিরা। ফলে এ নিয়ে নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, আদালত থেকে জঙ্গিদের কারাগারে নেওয়ার সময় প্রিজনভ্যান থেকে সম্ভবত ওই টুপিটি ফেলে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গণমাধ্যমে প্রচার পেতেই জঙ্গিরা আইএসের চিহ্ন সংবলিত ওই টুপিটি পরেছিল।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বুধবার ৮ জঙ্গিকে আদালতে নিতে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় তাদের কারও মাথায় ওই বিশেষ টুপি ছিল না। শুধু কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় জঙ্গি মাহফুজুর রহমান ওরফে সোহেল মাহফুজের মাথায় একটি সাদা টুপি ছিল। ফলে কারাগারের বাইরে কোথা থেকে কীভাবে আইএসের চিহ্ন সংবলিত টুপিটি রিগ্যানের কাছে এলো সেটি তারা জানেন না। রিগ্যানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলেছে, আদালত থেকেই সে এই টুপি পেয়েছে। তবে কীভাবে পেয়েছে, এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি।
তবে টুপি রহস্য উন্মোচনের তদন্তে থাকা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, কারাগার থেকেই রিগ্যান ওই টুপি এনেছে। প্রিজনভ্যান বা আদালতের মধ্যে তার পক্ষে এই টুপি পাওয়া সম্ভব নয়।
এই টুপি কীভাবে এলো সে বিষয়ে গতকালই কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান কারা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কারাগার থেকে প্রতিদিনই আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়। বছর শেষে আদালতের অবকাশ থাকায় নভেম্বরে সেই চাপ আরও বাড়ে। কিন্তু জঙ্গিদের আদালতে নেওয়ার সময় গুরুত্ব সহকারে স্ক্যান করা হয়, যাতে তারা অবৈধ কিছু বহন করতে না পারে। বুধবারও ওই জঙ্গিদের কারা ফটক থেকে বের করার সময় স্ক্যান করা হয়। সে সময় তাদের মাথায় আইএসের পতাকা সংবলিত টুপি ছিল না। একটি টুপি ছিল, সেটি সাদা। কারাগারের বাইরে তারা কোথায় বা কীভাবে টুপি পেয়েছে সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। আবার রায়ের পর আইএসের চিহ্ন সংবলিত টুপিটি কারাগারে ফেরত আসেনি। সেটি কোথায় আছে সে বিষয়েও আমরা জানি না।
রিগ্যানের মাথার ওই টুপি কোথা থেকে এলো তা নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, জঙ্গিদের আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ায় নেওয়ার সময়ও সোহেল মাহফুজের মাথায় একটি সাদা টুপি ছিল। পরে রিগ্যানের মাথায় আইএসের চিহ্নসহ কালো টুপি কীভাবে এলো সেটি চিন্তার বিষয়।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আদালতে তোলার পর সেখানকার বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে রিগ্যানের মাথায় কালো টুপি দেখা যায়নি। তবে আদালতের হাজতখানা থেকে এজলাসে তোলার সময় তার মাথায় একটি কালো টুপি দেখা যায়। রায় শেষে রিগ্যানকে এজলাস থেকে বের করার সময়ও তার মাথায় টুপিটি ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে টুপিটি কারাগার থেকেই পকেটে করে এনেছিল সে। অন্যদিকে ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, প্রথমে রিগ্যান কালো টুপিটির উল্টা অংশ মাথায় দিয়ে এজলাসে প্রবেশ করে। আর রায়ের পর এজলাস থেকে বেরুনোর সময় সে টুপিটি উল্টিয়ে পরলে তাতে আইএসের চিহ্ন দেখা যায়। তাই তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রিগ্যান এ কাজটি করেছে। ওই একই টুপি প্রিজন ভ্যানে ওঠার পর রিগ্যানের কাছ থেকে নিয়ে জঙ্গি রাজীব গান্ধীও মাথায় দেয়। পরে আদালত থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় তারা টুপিটি পথের কোথাও ফেলে দেয়। অর্থাৎ একটি টুপিই গতকাল দুই জঙ্গি ঘুরেফিরে পরেছিল।