muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

‘কিভাবে খেললে জেতা যায় শুধু সেটা নিয়েই ভাবি’

bangladesh cricket coach

হাতুরাসিংহেকে দেখাচ্ছিল পাশের বাড়ির বড় ভাইয়ের মতো, যিনি যেকোনো আবদার মেটাতে তৈরি। এমনিতে কড়া গোছের হেডমাস্টারের মতোই চরিত্র তাঁর, কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে নিজের বাড়িতে গিয়ে যেন সেই মাস্টারের চেহারা লুকিয়ে তিনি হয়ে গেছেন আর দশজনের একজন।
সিডনি শহরের রাইড নামের জায়গার ডাবলিন স্ট্রিটে তাঁর আবাস, পরিবার সেখানেই আছে বলে বিশ্বকাপ শেষে দল চলে গেলেও তিনি রয়ে গেছেন সিডনিতেই। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কেউ কেউ সেখানে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। তিনি কাল সময় দিলেন নিজের বাড়ির খুব কাছের একটা শপিং মলে আর দুপুরে সেখানে তাঁকে ঘিরে তৈরি হলো অদ্ভুত একটা পরিবেশ। তিনি দাঁড়িয়ে আর গোটা দশেক ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করা, দেখে শপিং মলের লোকজন যাকে বলে বিস্মিত। মানুষটা আসলে কে? যখন জানা গেল ইনি বাংলাদেশের ক্রিকেট কোচ তখন বিস্ময়টা আরো বাড়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেট কোচ তাদের দেশের মানুষের কাছে এতটা প্রার্থিত।

প্রথাগত সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন। ম্যাচনির্ভর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কাল সেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এতটাই আন্তরিক যে সাক্ষাৎকার দিলেন দুই পর্বে। টিভির সঙ্গে কথা বলার পর আবার পত্রিকার সঙ্গে আলাদা করে। নিজের চেনা গণ্ডি, রাশভারী চরিত্র ছেড়ে বেরোনায় সাক্ষাৎকার রূপ নেয় আড্ডায়, প্রশ্নের পর প্রশ্ন। আর তাতে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে এলো তাঁর কোচিং-দর্শন, ভবিষ্যৎ চিন্তা, বাংলাদেশ দল নিয়ে স্বপ্ন। স্বপ্নটা যেমন বড় তেমনি সাক্ষাৎকারটাও এত বড় হয়ে গেল যে রেকর্ডার থেকে তোলার পর সবার সমস্যা হয়ে দাঁড়াল কোন কোন জায়গাটা বাদ দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত যোগ-বিয়োগ করে যা রাখা গেল দেখা যাচ্ছে তাতেও অনেক কথা। অনেক আশা। অনেক স্বপ্ন।

‘কিভাবে খেললে জেতা যায় শুধু সেটা নিয়েই ভাবি’

প্রশ্ন : এখানে আসার আগে সত্যিকারের প্রত্যাশাটা কী ছিল? আপনি কি ভেবেছিলেন যে এ রকম একটা কিছু সত্যিই করে ফেলবে দল?

চন্দিকা হাতুরাসিংহে : কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ছিল মূল টার্গেট। তারপর ম্যাচ ধরে আগানো। সেভাবেই ভেবেছিলাম। এখন যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলো, তাহলে আমি বলব ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি। সেখানে আবার নিজেদের দেখাতে চাই।

প্রশ্ন : দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুটা ভালো ছিল না একদম। ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দল ভালো খেলেনি। ঠিক সেই সময় নিজের পরিকল্পনায় অটল থাকা, নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখা যথেষ্ট কঠিন ছিল। সেই সময়ের ভাবনাটা কেমন ছিল?

হাতুরাসিংহে : ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটাতে আসলে আমি কিছু করিনি। আমি খেলোয়াড়দের দেখতে চেয়েছি, বুঝতে চেয়েছি। দেখতে চেয়েছি তারা কেমন খেলে, সিরিজটা কেমন যায় এবং কোন কোন জায়গায় আমরা উন্নতি করতে পারি। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা সাকিবকে ছাড়া খেলতে হয়েছে, সেখানে আমাদের কিছু করারও ছিল না। ওই সিরিজ দিয়ে অবশ্য আমি বুঝেছি কোথায় উন্নতি করতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ব্যক্তিত্ব এবং মানসিকতা বুঝে কাকে নিয়ে কিভাবে কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলি। দেশে ফিরে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজের জন্য ড. ফিল জোন্সকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেই। মানসিকতা নিয়ে অনেক কাজ করি আমরা। তারপর ফিটনেসের ওপরও জোর দেওয়া হয় অনেক। মারিও (ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন) খুবই ভালো কাজ করেছে যে জন্য বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত কোনো ইনজুরি ছিল না। যদিও যা চেয়েছিলাম সেটা শতভাগ করা সম্ভব হয়নি, তবু অনেক কিছুই পরিকল্পনামতো করা গেছে।

প্রশ্ন : দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্তি হিসেবে কোন জায়গাটা আপনার চোখে ধরা পড়ে? খেলোয়াড়দের দক্ষতা, তাঁদের উদ্দীপনা না অন্য কিছুু।

হাতুরাসিংহে : স্কিল। সেটাই আমার চোখে লাগে সবচেয়ে বেশি। মনে হয় ওদের দিয়ে সম্ভব। যখন আমি দায়িত্বে আসিনি তখনও বাংলাদেশ দলের খেলা দেখলে মনে হতো এদের মধ্যে প্রতিভা আছে কিন্তু মানসিকভাবে ঠিক বিন্যস্ত নয়। বিশ্বাসের অভাব আছে। কিন্তু গত ছয় মাসে আমি দেখেছি খুব দ্রুত তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে তাদের সামর্থ্য আছে। একবার যদি বিশ্বাস তৈরি হয়ে যায় যে আমরা পারব তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

প্রশ্ন : এখানে যেসব সাংবাদিক আছেন তাঁরা প্রত্যেকেই অনেক দিন ধরে ক্রিকেট কভার করছেন। বাংলাদেশ দলকে দেখছেন কিন্তু সত্যি বললে দলের মধ্যে এ রকম বিশ্বাস আমরা আগে দেখিনি। আগে তারাও মনে করত, মাঝেমধ্যে আমরা ম্যাচ জিততে পারব কিন্তু এবার যেন ওদের মধ্যে এই বিশ্বাসটা চলে এসেছিল যে যে কাউকে আমরা হারাতে পারব।

হাতুরাসিংহে : আমি বিশ্বাস বলতে জেতার বিশ্বাসটা বলছি না। আমি বলছি, সেই বিশ্বাসের কথা যাতে খেলোয়াড়রা মনে করে আমরা যা করতে চাই তা করা সম্ভব। তোমরা দেখেছ আমি অনেক কিছু পরিবর্তন করেছি এবং সেজন্য অনেকে সমালোচনাও করেছ। কিন্তু আমি জানি আমরা কী করেছি। আমারও মনে হয়েছিল সব কিছু বদলাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তারা সব কিছু দ্রুত শিখেছে। সাধারণত যেটা শিখতে এক-দেড় বছর লাগে তারা সেটা শিখেছে তিন চার মাসে। এর কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের দিতে হবে।

প্রশ্ন : সমালোচনার কথা বললেন, সাকিবের নিষেধাজ্ঞার সময় আপনাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু আপনি তখন কোনো উত্তর দেননি, কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে শান্ত থেকেছেন। কিভাবে এটা সম্ভব হলো?

হাতুরাসিংহে : সম্ভব হয়েছে কারণ আমি জানতাম আমি ভুল করিনি।

প্রশ্ন : আপনি সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে দেখেছেন অনেক বিতর্ক হয়েছে। আপনার কাছের অনেক লোক আপনার বিরুদ্ধে মতামত দিচ্ছে…

হাতুরাসিংহে : কারণ তারা কেউ সঠিক ছিল না এটা আমি জানতাম তাই আমি রাগ করিনি।

প্রশ্ন : তাহলে কি সেগুলো শুনে আপনি নিজে নিজে হাসতেন?

হাতুরাসিংহে : না আমি হেসে উড়িয়ে দেইনি। আমি জিনিসগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতাম।

প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন এটাই আপনার শক্তির জায়গা যে, আপনি সব উপেক্ষা করতে পারেন? অনেক কিছু দেখার পরও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না। যেটা আমরা আগে দেখেছি অনেক কোচ কোনো কোনো সময় প্রতিক্রিয়া দেখাত!

হাতুরাসিংহে : সেটা তোমরা বলতে পার, কিন্তু আমি আমার শক্তি এবং দুর্বলতার জয়গা নিয়ে ভাবিনি। আমি শুধু ভেবেছি আমাকে ওখানে যেতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সেভাবে এগিয়েছি। খেলোয়াড় এবং সাপোর্ট স্টাফরা আমাকে সাপোর্ট করেছে। এগুলোই আমি করেছি। সব দিক থেকে বোর্ডের সাপোর্টও পেয়েছি। বিশেষ করে বোর্ড সভাপতি খুব সাপোর্ট দিয়েছেন।

প্রশ্ন : এবার মাঠের ক্রিকেটে আসি। মাহমুদ উল্লাহকে চার নম্বরে নিয়ে আসাটাকে এখন মাস্টারস্ট্রোক মনে হচ্ছে। তখন পরিকল্পনাটা কী ছিল?

হাতুরাসিংহে : আমরা জানতাম সে পারবে। সে যে ধরনের খেলোয়াড় তাতে একটু সময় লাগে ওর ধাতস্থ হতে। মুশফিক চার নম্বরে ব্যাটিং করত এবং সে আমার সেরা খেলোয়াড়। আমার কাছে সে এই বিশ্বকাপের আনসাং হিরো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ৮৯ রানের ইনিংসটাই আসলে ম্যাচ উইনিং ইনিংস। হ্যাঁ। মাহমুদ উল্লাহ তার দায়িত্ব পালন করেছে এবং মুশফিকও তার দায়িত্ব পালন করেছে। এই কন্ডিশনে তিন উইকেট পড়ে গেলে ম্যাচে ফেরা কঠিন তাই মিডল অর্ডারকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে তারপরও তারা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি রাখে। আমি খেলোয়াড়দের কাছে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছি যে এ জন্য আমরা এই কাজটা করছি। তারা সেভাবেই সেটা মেনে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। সমস্ত কৃতিত্বই তাদের, আমার না। তারা তাদের সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে খেলেছে, দলের জন্য খেলেছে। আমাদের দলে এক নম্বর অলরাউন্ডারও আছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল হিসেবেই খেলেছি আমরা। আমার মনে হয় আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছি।

প্রশ্ন : সাকিব এবং মুশফিক দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান। এবং সাধারণত ওয়ানডেতে বিশ্বাস করা হয় সেরা খেলোয়াড়দের যত বেশি সম্ভব বল খেলানো উচিত। আগে ব্যাট করলে হয়তো তাঁরা আরো বেশি অবদান রাখতে পারত। মুশফিককে চার নম্বর থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক।

হাতুরাসিংহে : আমাকে বলেন মুশফিক চার নম্বরে খেলা ম্যাচগুলোর কয়টাতে বাংলাদেশ জিতেছে। এখন আমি তোমাদের কাছে জানতে চাই, তাঁর চার নম্বরে খেলা গুরুত্বপূর্ণ না ম্যাচ জেতা, কোনটা। আমার কাছে ম্যাচ জেতাটাই সবচেয়ে আগে। আমার কাছে যদি মনে হয় সে চার নম্বরে ব্যাট করলে দল জিতবে তাহলে সে চার নম্বরে ব্যাট করবে।

প্রশ্ন : পরীক্ষিতদের কথা বাদ দিয়ে যদি আমরা নতুনদের প্রসঙ্গে আসি। সৌম্যর ইতিবাচক মনোভাব দৃষ্টি কেড়েছে প্রায় সবার।

হাতুরাসিংহে : সে ভবিষ্যৎ। আমার দেখা মতে সে বাংলাদেশের সেরা তরুণ খেলোয়াড়। তার যত্ন নিতে হবে। একটা-দুটো পারফরমেন্স দেখে যেন কেউ হতাশ না হয়ে যাই। উদাহরণ হিসেবে স্টিভ স্মিথকে দেখো। সে এখন সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু সে তিন বছর দলের বাইরে ছিল। এখন ফিরে এসে দারুণ পারফর্ম করে অন্যদের চাপে ফেলেছে। তরুণ খেলোয়াড়রা এ রকম খেলে চাপ তৈরি করলে তাতেই আসলে ক্রিকেটের উন্নতি হবে।

প্রশ্ন : সৌম্য যাঁর জায়গায় খেলল সেই মমিনুলের বিষয়ে মূল্যায়নটা একটু বলবেন। টেস্টে দারুণ পারফর্ম করা মমিনুল ওয়ানডেতে ঠিক স্যাটল হতে না পারার কারণটা কি মনে হয় আপনার?

হাতুরাসিংহে : মুমিনুলকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। আমি মনে করি সৌম্য মমিনুলের থেকে বেশি কিছু দিচ্ছে তিন নম্বরে। তাদেরই খেলানো হবে যারা দলের জন্য সে রকম অবদান রাখতে পারবে। আমি কখনো বলিনি মমিনুল ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে পারে না, সে খুবই ভালো খেলোয়াড়। কিন্তু এ পর্যায়ে আমাদের কম্বিনেশনে তাকে সেভাবে খেলানো সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন : এত কিছুর মধ্যেও প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়ে গেল ওপেনিং জুটি। ঠিক জমল না!

হাতুরাসিংহে : অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুটো নতুন বলের বিপক্ষে ইনিংস শুরু করা। তামিমের কথা যদি বলি স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তার ৯৫ রানের ইনিংসটা খুবই ভালো ছিল। ওর ইনিংসের ওপর ভর করেই আমাদের তিন শর বেশি রান চেজ করা সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও দারুণ ব্যাটিং করেছে, যদিও সেটা কেউ দেখেনি। কারণ সেটা প্র্যাকটিস গেম ছিল। আমার ধারণা তামিম অন্য যে কারো চেয়ে বেশি হতাশ। তার কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া যায়নি। তাকে নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে নিশ্চয়ই আপনি দারুণ সন্তুষ্ট? অতটা তো আসলে কেউ ভাবেনি।

হাতুরাসিংহে : তারা এখানে ভালো করেছে, কন্ডিশন থেকে যে সুবিধা পাওয়া গেছে সেটা কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ভিন্ন কন্ডিশনে যখন খেলা হবে তখনও তারাই সামনে থাকবে। প্রতিটা ম্যাচ, প্রতিটা প্রতিপক্ষ আলাদা। সেভাবেই পরিকল্পনা হবে। সেভাবেই সাজানো হবে সব কিছু। খেলোয়াড়দেরও আমি বলেছি প্রতিটা ম্যাচেই তোমাদের পারফর্ম করতে হবে। অতীত পারফরমেন্স আমার কাছে কিছু না। তুমি এখন কী করতে পারছ সেটাই আসল।

প্রশ্ন : দলে তিনজন স্পিনার ছিল কিন্তু সত্যি বললে দুজনকে সেভাবে খেলানোই হয়নি। তাহলে তিনজন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে আসার কারণটা কি?

হাতুরাসিংহে : আমি তো তাদের আনিনি। তাদের বাছাইয়ের কাজটা আমার ছিল না।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের এই পুরো সাফল্যযাত্রায় অধিনায়ক মাশরাফির ভূমিকা কতটুকু? আমরা দেখেছি তাঁর পারফরমেন্স, তাঁর ব্যক্তিত্ব দলে টনিকের মতো কাজ করেছে।

হাতুরাসিংহে : সে অসাধারণভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। সে একজন সত্যিকারের নেতা, আমি তো বলব নেতা হিসেবে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সতীর্থদের কাছে সে অনেক বড় ভরসার নাম, তাদের কাছ থেকে খেলা আদায়ে যা খুব সহায়ক হয়েছে।

প্রশ্ন : আধুনিক ক্রিকেটে কোচ আর অধিনায়কের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা হয়। আমাদের মতো ক্রিকেটে দেখা যায় কোচের সীমা থাকে অনেক বড়, অনেক ক্ষেত্রে তাই নিয়ে সমস্যা হয়। অধিনায়ক-কোচ জুটিটা জমে না। আপনি কোচ-অধিনায়কের সম্পর্কের রসায়নটাকে কিভাবে দেখেন?

হাতুরাসিংহে : কোচ এবং অধিনায়কের বিষয়টা পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের সম্পর্কটা খুবই ভালো। এমনকি সাকিব, মুশফিকের সঙ্গেও। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানে এবং আমি আমার ভূমিকা সম্পর্কে জানি। যেজন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা মসৃণভাবেই কাজ করেছে।

প্রশ্ন : ফুটবলে কোচ অনেক বড় ব্যাপার। বলা যায় সর্বেসর্বা। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছুই কোচ করেন। আপনি কি মনে করেন কোনো একদিন আসবে যেদিন ক্রিকেট কোচও ফুটবলের কোচের মতো সব দায়িত্বের মালিক হয়ে যাবে। সে-ই দল নির্বাচন করবে, তাঁর মতো করেই হবে সব কিছু।

হাতুরাসিংহে : আমার মনে হয় কোচের ক্ষমতার সীমানা আরো বিস্তৃত হবে কিন্তু ফুটবলের মতো অতটা কখনো হবে না। কারণ ক্রিকেটটা মাঠের ভেতরে অধিনায়ক চালায়। তবে সাফল্য-ব্যর্থতার দায়-দায়িত্বের অনেক বেশি যখন কোচকে নিতে হয় তখন আমি মনে করি সব কিছুতে তাঁর মতামতের গুরুত্ব আরেকটু বেশি থাকা উচিত। যে খেলোয়াড়দের নিয়ে তাঁকে জেতার পরিকল্পনা করতে হয় তাদের সম্পর্কে তাঁর মতামতের গুরুত্বটা তো আরেকটু বেশি থাকতে হয়। তুমি যদি ১৫ জন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকতে পার এবং সেভাবে ম্যাচ জয়ের জন্য পরিকল্পনা করতে পার তাহলে ভালো হয়। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে কোচদের মতামতের গুরুত্ব আরেকটু বেশি থাকা উচিত। অস্ট্রেলিয়াতে ড্যারেন লেম্যানের দল নির্বাচনে মতামত থাকে। নিউজিল্যান্ডেও কোচ দল নির্বাচনে থাকে। সেই দলগুলোর সাফল্য আমার কথার পক্ষে যুক্তি নিশ্চয়ই।

প্রশ্ন : আপনি কি সে রকম ভূমিকা চান। যদি চান তাহলে সে বিষয়ে নিজে থেকে বোর্ডের কাছে দাবি জানাবেন কি না?

হাতুরাসিংহে : না, আমি নিজে থেকে বলতে চাই না। এটা বোর্ড দেখবে। তাদের ওপর নির্ভর করবে।

প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ আসলে উপমহাদেশে। কারণ এখানে মানুষ ক্রিকেটটা খুব অনুসরণ করে না, যতটা উপমহাদেশে করে? ২০ বছর পর বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটা হবে বাংলাদেশ আর ভারতে।

হাতুরাসিংহে : আমি জানি না। এ দেশের বিষয়টা হলো তাদের অন্য খেলা আছে। তা ছাড়া মানুষের পছন্দ নানামুখী কিন্তু উপমহাদেশে যে খেলাটা ডমিনেট করে সবাই সেদিকেই ঝোঁকে। এর ভালো দিক হলো অনেক খেলাতে অনেক টাকা আছে। যেজন্য তারা ভালো করছে এবং বেশি মানুষ খেলছে, প্রতিভা বের হচ্ছে।

প্রশ্ন : তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল?

হাতুরাসিংহে : বাংলাদেশে ১৬০ মিলিয়ন লোক। দারুণ আবেগ। কিন্তু সমস্যা হলো ক্রিকেট কাঠামোটা এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো শক্তিশালী হলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আসবে আরো বেশি এবং তাহলে আমরা ভারত-শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যেতে পারব। তুলনা করলে আমাদের কাঠামোটা ভারত-শ্রীলঙ্কার মতো ঠিক গোছানো না। সেটা ঠিকঠাক গুছিয়ে আনতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

প্রশ্ন : এই যে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক সেটাকে কিভাবে দেখেন? দলের খেলোয়াড়দের ব্যাপারটা সামাল দিতে কী করার পরামর্শ দিয়েছেন?

হাতুরাসিংহে : আম্পায়ারিং নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না। আর যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার কথা তোমাদের কাছে শুনলাম সে সম্পর্কে আমি খুব বেশি জানি না। তবে হ্যাঁ, এসব ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের আমি এই পরামর্শই দেই যেটা তোমার নিয়ন্ত্রণে আছে, যেটা তুমি বদলাতে পারবে নিজের চেষ্টায় সেটা নিয়েই ভাববে শুধু। যেটা আমাদের হাতে নেই সেটা নিয়ে তো ভেবে লাভ নেই।

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন, এবারের শিরোপা শেষ পর্যন্ত কে জিতবে বলে মনে করেন?

হাতুরাসিংহে : আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়া। সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল খেলবে এবং অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হবে।

Tags: