মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইরান, ইরাক, কুয়েত কিংবা পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে এ ধরনের ব্যাংক আগে থেকে থাকলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম এর উদ্যোগ নিয়েছে মাতুয়াইলের শিশু এবং মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক-এর সমন্বয়ক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ধর্মীয় সব বিষয় মাথায় রেখে এবং ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করেই এটা করা হয়েছে; বিপন্ন শিশুদের কথা চিন্তা করে। কারণ অনেক সময় এমন মাহারা অনেক বিপন্ন শিশু আমরা পাই যাদের মায়ের দুধ পেলেই বাঁচানো সহজ হয়।
আবার অনেক সন্তানহারা মা আছেন যারা নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই বিপন্ন শিশুদের জন্য নিজের বুকের দুধ দিয়ে মানসিক শান্তি পেতে চান। এমন বহু নারীর অনুরোধও তাদের মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করেছে বলে জানান তিনি।
কিন্তু এর মধ্যেই কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’কে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধ পান করা বা এ ধরনের মিল্ক ব্যাংক স্থাপন করা হারাম দাবি করেছে।
তাফসির পরিষদ নামে একটি সংগঠনের দাবি হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের মাধ্যমে বহু অজানা দুধ ভাই-বোন হবে যাদের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক হবে হারাম। তাদের মধ্যে নিজেদের অগোচরে বহু হারাম বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
তবে মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোক্তারা বলছেন, ধর্মীয় বিধান মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলেও মনে করেন তারা।
দুধ ভাই-বোনের বিয়ের শঙ্কার বিষয়ে উদ্যোক্তা ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, এমন কোনো আশঙ্কাই থাকবে না কারণ মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধ দাতা ও গ্রহিতা পরস্পর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন এবং তাদের নিজস্ব পরিচয়পত্রও থাকবে। এমনকি তাদের তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রতি বছর প্রকাশও করা হবে যাতে করে দাতা ও গ্রহিতার সব প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় বিষয়গুলো দেখার জন্য ইরান ও কুয়েতে কীভাবে মিল্ক ব্যাংক পরিচালিত হয় তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ডা. মুজিবুর রহমান আরও বলেন, প্রতিটি মায়ের দুধ আলাদা বিশেষ পাত্রে নেয়া হবে এবং আলাদা লেবেলিং থাকবে যা কখনো নষ্ট হবে না। যিনি দুধ দেবেন তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি নিজেও নিজের দুধ প্রয়োজনে নিতে পারবেন বা অন্য কেউ নিলে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আইডি কার্ড থাকবে। দাতা ও গ্রহিতা এ বিষয়ে একে অন্যের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়া বিয়ের মতো সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই ব্যাংক সাধারণভাবে সবার জন্য নয়, এটি বিশেষ ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর জন্য যেখানে জীবন বাঁচানোর চেষ্টাই প্রধান কর্তব্য।
এটা কিন্তু সাধারণ ব্যবহারের জন্য নয়, যেসব শিশুর আর কোনো বিকল্প নেই তাদের জন্য। এমন কিছু রোগ আছে মায়ের দুধ ছাড়া ভালো হয় না। সেসব ক্ষেত্রে এ দুধ ব্যবহার করা হবে। অনেকে নিজের দুধ জমা রেখে নিজের সন্তানকে খাওয়াতে পারবেন। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য জরুরি- এ মহৎ উদ্দেশ্যে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে বিস্তারিত ডাটা সংরক্ষণ করে মায়ের দুধ সংগ্রহ ও দেয়া হবে এই মিল্ক ব্যাংক থেকে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এছাড়া মিল্ক ব্যাংকের দুধটা দেয়াও হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
কবে নাগাদ যাত্রা শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে এবং সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে এটি শুরু করতে চাইলেও কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে শুরু হয়নি। কারণ আমরা সবাই বিষয়টি বুঝিয়ে ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হতে চাই। বিয়ের বিষয়ে বিভিন্ন মাজহাবে বিভিন্নভাবে বলা আছে। কিন্তু আমরা তাদের বোঝাতে চাই যে এর সাথে ধর্মের কোনো বিরোধই হবে না। কারণ এটি সম্পূর্ণ বিপন্ন শিশুর জীবন বাঁচানোর জন্য।
তিনি জানান, ইরানে ২০১৬ সালে এই ব্যাংক শুরু হয়েছে এবং এ বছর আরও কয়েকটি ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। কুয়েত, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত ও পাকিস্তানেও আছে।
মুসলিমদের জন্য কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না এ নিয়ে কয়েক মাস আমরা কাজ করেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আলেমদের সামনে ব্রিফিং করেছি। আমরা নিশ্চিত করেছি যে এটি নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। তারপরেও আমরা আরও আলোচনা করে সবার সহযোগিতা নিয়ে মানবকল্যাণে এই ব্যাংকের কাজ শুরু করতে চাই।
সূত্র : বিবিসি বাংলা