muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই। আমরা সবসময় চাই সেনাবাহিনী হবে যুগোপযোগী, আধুনিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত এবং এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

রোববার  দুপুরে ভাটিয়ারীস্থ বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্স সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০১৯’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই নতুর নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেট, ইউনিটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি।

সশস্ত্র বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই। পাশাপাশি নবীন সেনা সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলারও আহবান জানান তিনি।

ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার সাবির নেওয়াজ শাওন ৭৭তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে সেরা চৌকষ ক্যাডেট বিবেচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে গৌরবজনক ‘সোর্ড অব অনার লাভ করেন। এছাড়া কোম্পানী সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো.বরকত হোসেন সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।

পরে ক্যাডেটগণ আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন ও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণ নবীন অফিসারদের র‌্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন এবং ক্যাডেটদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি নবীন অফিসারদের এই কথাই বলবো-নবীন অফিসাররা জাতির পিতার একথা মেনে চললে সততাই শক্তি-একথাটা মনে রাখতে হবে এবং দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের সম্মান যেন সবসময় সুউচ্চ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব সকলের। সকলে মিলে আসুন আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলি।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার অবদান স্মরণ করে বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে সামরিক বাহিনীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। একারণে একটি শক্তিশালী, প্রশিক্ষত এবং দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মিলিটারি একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন।

তিনি ১৯৭৪ সালে কুমিল্লায় মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাময়িকভাবে কুমিল্লায় এই মিলিটারি একাডেমির উদ্বোধন করা হয়। যেটা ছিল একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যুদ্ধ বিধ্বস্থ একটি স্বাধীন দেশে সীমিত সম্পদ স্বত্ত্বেও এই যাত্রা শুরু করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

জাতির পিতার মিলিটারি একাডেমি উদ্বোধনের দিন প্রদত্ত বক্তৃতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন এই মিলিটারি একাডেমি একদিন মানসম্পন্ন হবে এবং বিশ্ব তাকিয়ে দেখবে।

তিনি বলেন, আজকে আমি এইটুকু বলবো, আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশেষ করে সেনা বাহিনীকে অত্যন্ত চৌকষ এবং দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর আজকে নতুন কর্মস্থলে আপনারা পদার্পন করবেন। জাতির পিতা যে নির্দেশ দিয়েছেন, যে শপথ আপনারা গ্রহণ করেছেন-উর্ধতন কতৃর্পক্ষের নির্দেশ মান্য করা। সেটা যেমন আপনাদের করতে হবে সেই সাথে সাথে জাতির পিতা আরো বলেছিলেন-আপনাদের অধীনস্থ যারা থাকবেন, তাদের দিকেও আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে এবং যত্নবান হতে হবে।

শেখ হাসিনা এ সময় মিলিটারি একাডেমিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে বলেন, চার বছর মেয়াদি অনার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীও চালুকরা হয়েছে। গ্রাজুয়েটদের কমিশন লাভের সময়কাল আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি, যাতেএটা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা ২০২০ সালে তার সরকার এবং আওয়ামী লীগের যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ঐ সময়টিকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে, যে সময়ে বাংলাদেশে আর হত দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না।

এ সময় নেদারল্যান্ড সরকারের সহযেগিতায় আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার জন্য তাঁর সরকার গৃহীত শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি কৃতি ক্যাডেটটের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩৪ জন বাংলাদেশী, ২৯ জন সৌদি, ১ জন ফিলিস্তিনি, ১ জন শ্রীলংকানসহ মোট ২৬৫ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন।

Tags: