মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যাত্রীবাহী নৌযান। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) অধীনে উপকূলীয় এলাকায় চলাচলের লক্ষ্যে নির্মিয়ান তিনতলা বিশিষ্ট এই আধুনিক জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ৭০০ জন।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শনিবার এই জাহাজের ‘কিল লেইং ও বটম কনস্ট্রাকশন’ (মূল অবকাঠামো) কাজের উদ্বোধন করেছেন।
বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় এলাকায় চলাচলরত তিনটি যাত্রীবাহী জাহাজ থাকলেও সেগুলো বিদেশ থেকে ক্রয় করা। এর দুটির অর্থনৈতিক আয়ূস্কাল ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। অপরটিও ১৫ বছরের পুরানো। তাই বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উপকূলে দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত এই নৌযানটি চট্টগ্রাম-সন্দীপ-হাতিয়া-বরিশাল নৌপথে চলাচল করবে। দেশীয় অর্থায়নে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিয়ান জাহাজটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জাহাজটি নির্মাণ হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার নয়ানগরে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্রি এ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের নিজস্ব শিপইয়ার্ডে। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল শনিবার বিকেলে শিপইয়ার্ড পরিদর্শন এবং জাহাজের ‘কিল লেইং ও বটম কনস্ট্রাকশন’ কাজের উদ্বোধন করেন। পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) ফারুক আহমেদ ও গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবা বিলকিস।
নতুন এই যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সরকার নৌ-দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বাড়াতে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে উপকূলের যাত্রীদের জন্য নতুন এই জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশে বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ হচ্ছে। তাই বিদেশ থেকে জাহাজ আমদানির প্রয়োজন নেই। বরং বাংলাদেশ এখন জাহাজ রপ্তানি করছে।
এ সময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০ মাসের মধ্যে জাহাজটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তবে ১৭ মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করে বিআইডব্লিউটিসির কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনাপ্রবণ উপকূলে সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের স্বার্থে ১৯৬০ সালে জার্মানি থেকে প্রথম কেনা হয়েছিল ‘এমভি আলাউদ্দিন’ ও ‘এমভি মনিরুল হক’। এর দীর্ঘ চার দশক পর ২০০০ সালে চীন থেকে ‘এমভি বারো আইউলিয়া’ নামে আরেকটি জাহাজ আমদানি করে বিআইডব্লিউটিসি। যাত্রীচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবং বয়সের কারণে জাহাজগুলো বারবার মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় উপকূলে আরো একাধিক নতুন জাহাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করতে ব্যয় অনেক বেশি হওয়ার কারণে দেশেই এই জাহাজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর উন্মুক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কার্যাদেশ দেয় বিআইডব্লিউটিসি।