muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে : সৈয়দ আশরাফ

ashraf
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে হবে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই নির্বাচনে স্বাধীনতার প্রতীক, বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, শেখ হাসিনার মার্কা এবং মুক্তিযুদ্ধের মার্কা ‘নৌকা’ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

‘বাংলাদেশে এই সর্বপ্রথম রাজনৈতিক দলের মার্কা নিয়ে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে’ উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, ‘আমি সব সময় আমাদের দলের ভেতরে একটি বিষয়ে স্বোচ্চার ছিলাম। বিশ্বে প্রতিটি দেশে রাজনৈতিকভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ। যেভাবে বিশ্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, সেভাবেই বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার বাংলাদেশে নির্বাচন করছে।’

‘যেহেতু প্রথমবার দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে, সে কারণে হয়তো কিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। কিন্তু এই প্র্যাকটিসটা হওয়া উচিত ছিল এবং এরপর থেকে এই যে উদ্যোগটা গ্রহণ করা হয়েছে, এটা আগামীতে স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করবে।’

‘আমি চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি এবং চারবারই জয়লাভ করেছি’ উল্লেখ করে আশরাফ আরো বলেন, ‘কেন আমাকে মানুষ ভোট দেয়? আমি চারবার নির্বাচন করেও সেই সত্যটা খুঁজে পাইনি।’

‘আমার আচার-আচরণ না, আমার উন্নয়ন কর্মকান্ড? কী কারণে একজন ভোটার ভোট দেয়, আর কেনই আমাকে ভোট দেয়? সেটার রহস্য কিন্তু আমি খুঁজে পাইনিই।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার ঘটনা উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, ‘তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। তখন আমরা সাজেদা চৌধুরীর ভাষায় তৎক্ষণাৎ একটি বৈঠক করি। সেই বৈঠকে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচন করতেই হবে এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হতে হবে। সে নির্বাচনে কোনো ভায়োলেন্স থাকবে না। ভোটকেন্দ্র দখল করতে দেওয়া হবে না।’

‘সেই নির্বাচনের কথা নিশ্চয়ই আপনাদের (সাংবাদিক) মনে আছে। সেখানে কিন্তু চিপ ইলেকশন কমিশনার ইলেকশন ত্যাগ করার হুমকি দিয়েছিল। তারপরও কিন্তু নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ এবং র্যা বকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনে আইভী বিশাল ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল।’

সেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে যত রকম শঙ্কা ছিল, নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই সেই শঙ্কা কেটে যায়। কেউ কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি। এটাই কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্রেডিট। বর্তমান যে নির্বাচন হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবেই হবে।’

‘সব পৌরসভাই কিন্তু এক শ্রেণির নয়’ উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, ‘কিছু আছে প্রথম শ্রেণির, কিছু আছে দ্বিতীয় শ্রেণির, কিছু আছে তৃতীয় শ্রেণির এবং কিছু আছে নামে পৌরসভা। পৌরসভা ভেদে নির্বাচনের গুরুত্ব ভিন্ন হবে।’

‘আমার বিশ্বাস এই নির্বাচনে সরকারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা’ উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, ‘তাই আমি এই নির্বাচনে কোনো শঙ্কা দেখছি না।’

‘বেগম খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে দুই মাস পরে এলেন। সেখান থেকে আইসা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করলেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মৃত্যু নিয়ে কটাক্ষ করলেন।এইটা তো এই নির্বাচনের অংশ ছিল না। এটা স্থানীয় সরকার পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছে, সেটার বিষয় তো এটা না। এটা তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অংশ না। কেন আপনি শহীদের সংখ্যা নিয়ে জনগণের সামনে বিতর্ক সৃষ্টি করলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে যারা বুদ্ধিজীবী যারা ৪০ বছর আগে মারা গেছেন, তাদের নিয়ে আবার বিতর্কের কারণটা কি? নিশ্চয়ই তার কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে। সেটারই এটি অংশ ‘

খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আশরাফ বলেন, ‘আপনি এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই নির্বাচনে আপনার দল অংশগ্রহণ করবে। তাই নির্বাচনের মধ্যে নির্বাচন বয়কট করবেন না। কারণ নির্বাচনের মধ্যে নির্বাচন বয়কটের সুযোগ নাই।’

‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই’ দাবি করে আশরাফ বলেন, ‘আশা করি বেগম জিয়া এই সত্যটা উপলব্ধি করবেন এবং নির্বাচনে যাতে সকলের অংশগ্রহণ থাকে, উৎসবমুখর হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন।’

নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে ইসি তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেন সৈয়দ আশরাফ।

পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন অভিযোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের অভিযোগের প্রত্যেকটা বিষয় আমরা ইনভেস্টিগেশন করেছি। কিন্তু একটিরও সত্যতা খুঁজে পাইনি।

‘নির্বাচনে কথা যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই বিএনপি এবং বিএনপিঘেঁষা দলগুলো নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয় সেখানে তো বেগম জিয়া লাভবান হবেন না। শেখ হাসিনাও লাভবান হবেন না। নির্বাচন বিতর্কিত হলে রাষ্ট্রের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না। তাই আসুন নির্বাচনটা উৎসমুখর পরিবেশে করি।’

যে বেশি ভোট পাবে সেই জয়ী হবে- উল্লেখ করে আশরাফ বলেন, ‘বেগম জিয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আসলে উনি দেশটাকে ভালবাসেন না। মুক্তিযুদ্ধে মাধ্যমে যে দেশটা আমাদের সৃষ্টি হয়েছে, সেই দেশটাকে উনি মেনে নিতে পারেননি।’

‘আপনি দেশের গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবেন আর মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদেরকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার কামনা করেন। সেটাই হবে আপনার দেশপ্রেমিক রাজনীতির প্রমাণ।’

‘আমরা যদি আগামী পৌরসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়লাভ করি তাতে কিন্তু সরকারের কিছু যায় আসে না। আমরা যদি একটাতেও জয়লাভ না করতে পারে তাহলেও কিন্তু ৩১ ডিসেম্বরের পরে সরকার পরিবর্তন হবে না। সরকার পরিবর্তন হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে।’

নির্বাচন সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ হলো কি না- তা তুলে ধরার জন্য মিডিয়াকে রেফারির ভূমিকায় অবর্তীণ হওয়ারও আহ্বান জানান আশরাফ।

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার প্রতীক নৌর্কা, স্বাধীনতার প্রতীক বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার প্রতীক শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের মার্কা নৌর্কা। নৌর্কা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী করবেন সেটাই আমরা সবার কাছে কামনা করি।’

‘বিএনপির দাবি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়ের করতে হবে’- এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো দিনই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় নাই। এটা এই দেশের প্রথা নয়। জাতীয় নির্বাচনে তাদেরকে প্রয়োজনে তলব করা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল প্রমুখ।

Tags: