muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আইন আদালত

পিলখানা হত্যাকাণ্ড : ‘পেছনের ঘটনা’ খুঁজতে তদন্ত কমিশন গঠনের সুপারিশ

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে ‘ঘটনার পেছনের ঘটনা’ খুঁজে বের করতে সুপারিশ করেছে হাইকোর্ট। এ জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

দেশ-বিদেশে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় প্রদানকারী হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নের লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী মহলের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসের চক্রান্ত করা হয়েছিল।”

ভবিষ্যতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১১ দফা সুপারিশ করেন তিনি।   

তিন বিচারপতির সই করা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায়টি বুধবার সকালে প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এ রায় দেন। এর দুই বছরের বেশি সময় পর পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলো। একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।   

দেশের ফৌজদারি আইনের ইতিহাসে এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে পৃষ্ঠা সংখ্যার দিক থেকে বড় রায়। এর মধ্যে মো. আবু জাফর সিদ্দিকী একাই ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন। আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রায় ও পর্যবেক্ষণ পৃথিবীর বিচার বিভাগের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।    

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যার ঘটনায় হাইকোর্ট তার রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল (বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল ১৫২ জনের) রাখে। এ ছাড়া রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা (বিচারিক আদালতে ১৬১ জন) দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ ২০০ জনকে (বিচারিক আদালতে ২৫৬ জন) দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা।

হাইকোর্টের রায়ে ৪৫ জন খালাস পান। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় হয়। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আর কোনো মামলায় এত বেশি সংখ্যক আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা হয়নি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর বর্তমানে বিজিবি) ২১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাস বর্ণনা ও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কতিপয় জোয়ানদের কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ফার্স্ট ডিফেন্স ফোর্স হিসেবে অতন্দ্র প্রহরীরূপে বিডিআরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস অনস্বীকার্য। তাদের মেধা, দক্ষতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু মহাকালের গহ্বরে গৌরবগাথা সে ইতিহাস ও পেশাদারির ঐতিহ্যকে তারা ভূলুণ্ঠিত করেছে। আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহি প্রকাশ ঘটিয়েছে।”

ভবিষ্যতে যে কোনো বাহিনীর মধ্যে ‘অপারেশন ডালভাত’-এর মতো কর্মসূচি পরিহারের সুপারিশও করেছেন তিনি। একই সঙ্গে সামরিক/ বেসামরিক সকল শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্রিটিশ আমলের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করে সেবার মানসিকতা নিয়ে দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন এই বিচারপতি।

Tags: