চীনের নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ভাইরাসটির উৎপত্তি। শহরটিকে গোটা চীন থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। দশ লাখেরও বেশি নাগরিকের শহরটিতে আটকে পড়েছে বিদেশি নাগরিকেরাও, যাতে আছে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও।
করোনাভাইরাসে চীনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩২ এ দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৬ হাজার। এমন পরিস্থিতে সেখানে অবস্থান করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরতে উদ্গ্রীব হয়ে আছে।চীনের কুনমিং সিটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বর্ণ সিদ্দিকী জানিয়েছেন সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা।
এক ভিডিও বার্তায় নিজের দেশে না ফেরার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তার মতে, ফেরত যাওয়া বাংলাদেশিদের থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে গোটা দেশে।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে চীনে যে পরিমাণ আতঙ্ক বিরাজ করছে তা গণমাধ্যমে খবর আসছে না। আমি আমার চাইনিজ বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি যা বহির্বিশ্বের গণমাধ্যমে তেমন খবর প্রকাশ পাচ্ছে না। চীন সরকার চাচ্ছে না যে, এই ভাইরাসটার কারণে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ুক।’
বর্ণ সিদ্দিকী বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশের স্বার্থে আমি আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশে যাব না। কারণ কার মধ্যে ভাইরাসটি বাসা বেঁধেছে তা বলা দুষ্কর। রোগটার একটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এটি শরীরে আসার পর থেকে ১৪ দিন অবস্থান করবে এবং কোনো লক্ষণও প্রকাশ করবে না। এখন চীনে হাজার হাজার বাংলাদেশি আছেন। আমরা জানি না, এই রোগটা কার কাছে চলে এসেছে। এখান আমরা যদি দেশে ফিরে যাই তাহলে নিজের অজান্তেই কারও না কারও সঙ্গে এই ভাইরাস দেশে চলে যেতে পারে। তাই মরলে এখানে একাই মরব। বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়াতে দেব না। দেশের স্বার্থে এখন চীনে থাকাই উচিত বলে মনে করি আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসটি খুবই ছোঁয়াচে। দ্রুত বিস্তার ঘটায়। আমি চাই না বাংলাদেশে আমার পরিবারের মধ্যে এ রোগ ছড়াক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যেতে চাই না। আমার বাবা-মা যতই বলুক। আমি আসছি না। চীন সরকার মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ না পড়তেও নির্দেশনা দিয়েছে। কারণ ভিড়ের মধ্যে সংস্পর্শে এই রোগ ছড়াতে পাবে। একইভাবে আমি বাংলাদেশে ফেরত গেলে আমার দ্বারা যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। সে যদি মসজিদে যায়, তার মাধ্যমে সবার মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। পরিবার থেকে পরিবার আক্রান্ত হবে।’
তবে তিনি জানান, চীনা কর্তৃপক্ষ ভাইরাস মোকাবিলায় খুবই আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থীদের তারা কঠোর নজরদারিতে রেখেছে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কী না। নিয়মিত সবার খোঁজখবর রাখছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের তালিকা করার পর এখন বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সব প্রস্তুতি রাখার পরও চীন সরকারের দেয়া ১৪ দিনের সময়সীমার কারণে বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষা করছে।