আগামীকাল ঢাকার দুই সিটিতে সেই কাক্সিক্ষত ভোট। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে একই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। আর শেষ হবে বিকাল চারটায়। এবার প্রথম সব কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে নবীন ও প্রবীণ ভোটারদের মাঝে একটা অন্যরকম আবেগ কাজ করছে। এ উপলক্ষে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সবমিলে ভোটের দিন উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকবে বলে আশা করছেন প্রার্থীরা। এদিন প্রত্যেক মেয়রপ্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলররা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার কেন্দ্রে ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী পদে দুই দলই তাদের প্রার্থী দিয়েছে।
প্রায় ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত
দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রের ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে। মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে তিনটি ব্যালটে ভোট হবে। ভোটের আগের দিন সব সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। প্রতিটি কক্ষে অতিরিক্ত ইভিএমও মজুদ থাকবে।
তিন পদে প্রার্থী সাড়ে সাতশ’
ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন লড়ছেন।
পদ: সিটি করপোরেশনের মেয়র ১, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৫৪ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১৮টি।
ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮২ জন প্রার্থী।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দুইজন সাধারণ কাউন্সিলর এবং দুইজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
পদ: সিটি করপোরেশনের মেয়র ১, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৭৫ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ২৫টি।
পাঁচ বছর আগের প্রার্থী সংখ্যা (২০১৫)
ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ১৬ জন, ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৮১ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮৯ প্রার্থী ছিলেন।
দক্ষিণে মেয়র পদে ২০ জন, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯০ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
দুই সিটিতে ভোটার ৫৪ লাখের বেশি
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তরে ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন এবং ঢাকা দক্ষিণে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ ভোটার ছিল।
ভোটকেন্দ্র প্রায় আড়াই হাজার, ভোট কক্ষ ১৪ হাজারেরও বেশি
ঢাকা উত্তরে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি।
ঢাকা দক্ষিণে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮৮টি।
২০১৫ সালে ছিল ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ৯৩টি এবং দক্ষিণে ৮৮৯টি ভোটকেন্দ্র ছিল।
৫০ হাজারেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা
ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম এবং দক্ষিণে ইসির যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেন।
দুই সিটিতে রিটার্নিং অফিসার মোট ৪৩ জন (উত্তরে ১৮ জন ও দক্ষিণে ২৫ জন) সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে এবারের সিটি নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এছাড়া উত্তরে ২১ জন সহায়ক কর্মকর্তা এবং দক্ষিণে ২৮ জন সহায়ক কর্মকর্তা রয়েছেন।
প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও দুইজন পোলিং অফিসার দায়িত্বে থাকবেন।
দুই সিটিতে সব মিলিয়ে ২৪৬৮ জন প্রিজাইডিং আফিসার, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং আফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।
ইভিএম কারিগরি টিম: দুই সিটি ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিতে প্রতিকেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ২০১৫ সালে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা লেগেছিল প্রায় ৩৫ হাজার।
অর্ধ লাখ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য
নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই : ডিএমপি কমিশনার মহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ শেষে পুলিশ কমিশনার বলেন, গত এক মাস ধরে ঢাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চলছে। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়নি। প্রত্যাশা করছি যেসব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রার্থীরা সুষ্ঠু পরিবেশ বজার রাখবেন। তাহলে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কথা দিতে পারি, প্রতিটি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি প্রস্তুত।
নিরাপত্তা সদস্য: কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্য থাকছে ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবে।
মোবাইল ফোর্স: পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল টিমে থাকবেন ১ হাজার ২৯০ জন।
স্ট্রাইকিং ফোর্স: স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৪৩টি টিমে থাকবেন ৪৩০ জন।
রিজার্ভ: রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৫২০ জন।
র্যাব: দুই সিটিতে র্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম দায়িত্ব পালন করবে। গড়ে ১১ জন করে এতে মোট ১ হাজার ৪৩০ জন র্যাব সদস্য থাকবেন।
রিজার্ভ: দুই সিটিতে র্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, তাতে ১১০ জন সদস্য থাকবেন।
বিজিবি: রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন করে মোট ২ হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন ভোটের দায়িত্বে।
হাকিম: ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই সিটিতে থাকবেন ১৭২ জন নির্বাহী এবং ৬৪ জন বিচারিক হাকিম।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রায় ১২০০, সাংবাদিক কয়েক হাজার
২২টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক ভোট দেখবেন। এরমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে এসব সংস্থার ৫০৩ জন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫৭ জন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আরও ৫৩ জন পর্যবেক্ষক রয়েছেন।
ঢাকায় ১০ দেশের দূতাবাসের ৭৪ জন পর্যবেক্ষক ভোট দেখার কথা রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমের কয়েক হাজার সাংবাদিক কার্ড সংগ্রহ করেছেন।
ফল যেখানে
ঢাকা উত্তর সিটি করপোশন নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে শেরেবাংলা নগরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কেন্দ্রের ভোটের ফল সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে।
বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার পর কেন্দ্রভিত্তিক ভোট গণনা ও কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করবেন প্রিজাইডিং অফিসার। এরপর রিটার্নিং অফিসার একীভূত তথ্য নিয়ে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করবেন।
ঢাকা উত্তরে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম এবং দক্ষিণে ইসির আরেক যুগ্মসচিব মো. আব্দুল বাতেন।
আগামীল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার এই দুই সিটিতে ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার রয়েছেন। দুই সিটিতে মোট ১৬টি ভেন্যু থেকে ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে একযোগে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যেই ভোটগ্রহণের সরঞ্জামাদীও বিতরণ করেছে ইসি।