চাল রপ্তানির বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে মজুত উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন জারির দিন অর্থাৎ গতকাল থেকেই এ সুধিবা পাবেন চাল রপ্তানিকারকরা।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত ধান সংগ্রহের মাধ্যমে নিজস্ব কারখানায় প্রক্রিয়াকরণের দ্বারা তৈরি চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নিট এফওবি মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে প্রক্রিয়াকারী-রপ্তানিকারকরা ভর্তুকি পাবেন। তবে বিশেষায়িত অঞ্চলে (ইপিজেড, ইজেড) অবস্থিত প্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবহূত মোড়ক সামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর ডিউটি ড্র-ব্যাক ও শুল্ক বন্ড সুবিধা গ্রহণ করা হলেও ভর্তুকি দেওয়া হবে না।
দেশে এখন উদ্বৃত্ত চাল মজুত রয়েছে। তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কম থাকায় সেসব রপ্তানির সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে এবং নতুন বাজার তৈরির বিবেচনায় চাল রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের পর দেশের বাজারে দাম একেবারেই কমে যায়। কৃষক তার উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে ধান বিক্রি করেন। সে সময় ধানের স্থানীয় বাজারকে চাঙ্গা করতে সরকার দুই লাখ টন চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়। তবে বিদেশের বাজারেও চাল দাম কম থাকায় এ উদ্যোগের সুফল মেলেনি।
এর পরপরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত সেপ্টেম্বরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে চাল রপ্তানিতে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ভর্তুকি সুবিধা দেওয়ার আগে চালের উৎপাদন, ভর্তুকি, আমদানি মূল্য, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
সম্প্রতি ট্যারিফ কমিশনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে। যেখানে চাল রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেওয়ার পক্ষে মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬২ লাখ টন এবং ২০১৮-১৯ এ ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চালের মোট চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৫ লাখ টন চাল বেশি উৎপাদন হয়েছে। এ প্রেক্ষিতেই ২ লাখ টন চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
চালকল মালিক ও চালের রপ্তানিকারকরা বলছেন, ৪-৫ মাস আগে রপ্তানিতে ভর্তুকি সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে রপ্তানি সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে মিলাররা চালের রপ্তানিতে ২৮ শতাংশ ভর্তুকি দাবি করেছিল, যেখানে রপ্তানিকারকরা চেয়েছিল ২০ শতাংশ ভর্তুকি।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, ইতালিসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে চাল রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে এবং রপ্তানি হচ্ছে। তবে বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বলছে, খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামগুলোতে মোট মজুদ ১৬ লাখ ২ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১২ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং বাকিটা গম। খাদ্যশস্যের এ মজুদ সবোর্চ্চ ও সন্তোষজনক। যা মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত। এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু তারপরেও বাড়ছে চালের দাম। এমন পরিস্থিতিতে চাল রপ্তানি হলে বাজারে চালের দাম আরো বাড়বে এমন শঙ্কা জানাচ্ছেন অনেকে। আবার সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, এতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।