কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস Egyptian Businessmen’s Association (EBA)-এর সম্মেলন কক্ষে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে “BANGLADESH DAY” শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় মিশরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক বিভাগের উপ-সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূত মিজ্ নাগলা জাওয়াহিরি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় Egyptian Businessmen’s Association (EBA)-এর চেয়ারম্যান জনাব আলী হেলমি ইসা, EBA-এর চারজন বোর্ড মেম্বার সহ কায়রোস্থ বিভিন্ন চ্যাম্বারের ১৫ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্পৃক্ত ৪০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
উক্ত ওয়ার্কশপে দূতাবাসের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স জনাব এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল মিশর ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা বানিজ্যের সাম্প্রতিক অবস্থা এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির করনীয় সম্পর্কে তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় তিনি মিশরের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের তথ্য উপাত্ত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। এতে প্রতিয়মান হয় যে, মিশরের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে প্রথম বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশিদার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত দশ বছরে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। যা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২০ সাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী এবং ২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই মহেদ্রক্ষণকে স্মরণীয় করতে মিশরীয় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণকে বাংলাদেশে আরো বেশী পরিমাণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ তৈরী পোষাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। মিশরীয় ব্যবসায়িদেরকে বাংলাদেশ হতে প্রতিযোগিতা মূলক মূল্যে সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে মান সম্পন্ন তৈরী পোষাক, সিরামিকস্ দ্রব্যসামগ্রি, পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানির আহ্বান জানান। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে পিয়াজের উর্দ্ধ মূল্য মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক গৃহিত বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে অত্র দূতাবাস কর্তৃক গৃহিত উদ্যোগের কারণে যথেষ্ট পরিমাণে মিশরীয় পিয়াজ বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছিল। দূতাবাসের এই বিশেষ উদ্যোগকে কর্মশালায় আগত অতিথিগণ ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ব্যবসায়ীদেরকে মিশর হতে বিভিন্ন মৌসুমী ফল, সবজি, খনিজ দ্রব্য, রাসায়নিক সার, কটন বাংলাদেশে রপ্তানির আহ্বান জানান।
উপ-সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূত মিজ্ নাগলা জাওয়াহিরি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়োসি প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে মিশরীয় ব্যবসায়ীদের অধিক পরিমাণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। ক্লিন পাওয়ার ফর ন্যচারাল গ্যাস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালিদ সামির দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে তাঁর বিভিন্ন ব্যবসা ও বিনিয়োগের অভিজ্ঞতার কথা কর্মশালায় তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিশরীয় প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইজ্জত তাঁর বক্তব্যে মিশরীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি জানান বাংলাদেশ সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য অতিদ্রুত একটি যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। এমন একটি বাণিজ্য কর্মশালা প্রথমবারের মতো কায়রোতে আয়োজন করার জন্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিগণ দূতাবাসের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।