কিশোরগঞ্জের প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জেলার ৩৫ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালের মেডিসিন, অর্থোসার্জারি, ডেন্টাল, কার্ডিওলজি, চক্ষু, অর্থোপেডিক, গাইনীসহ বিভিন্ন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে কোনো চিকিৎসক নেই।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিন কিশোরগঞ্জ জেলা সদরসহ ১৩টি উপজেলা থেকে অসংখ্য রোগী ঢাকা ও ময়মনসিংহে গিয়ে চিকিৎসক দেখান। এতে এলাকার দরিদ্র লোকজন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সঠিক রোগ নির্ণয়, আধুনিক চিকিৎসায় জটিল রোগীকে প্রথমেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পরবর্তী সময়ে রোগীকে নির্দিষ্ট রোগের জন্য সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়।
কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে এ পদগুলো শূন্য রয়েছে। প্রতিদিন ১৩টি উপজেলা থেকে কয়েকশ’ রোগী হাসপাতালে এসে মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে, তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে ঢাকা বা অন্যত্র চলে যান।
হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আ স ম মাহবুবুল আলম জানান, তিনি কয়েক মাস হলো এখানে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকেই দেখতে পান হাসপাতালে মেডিসিনসহ ছয়টি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ৩৫টি পদে চিকিৎসক নেই। তিনি বলেন, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে কোনো জটিল রোগীকে অবশ্যই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়। আমি দেখেছি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ না থাকায় ১৩টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন অগণিত রোগী চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যান। জেলার ৩৫ লাখ মানুষের জন্য বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
রবিবার জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে এ প্রতিবেদকের কথা হয় অন্তত ১৫ জন রোগীর সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা। তাদের রোগ ভালো হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাদের মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে উপদেশ দিয়েছেন। তাই তারা কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পাননি। ওই রোগীদের কয়েকজন বলেন, তারা শুনেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকা থেকে শুক্রবার শহরের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে আসবেন। শুক্রবারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন তারা। গাইনী বিভাগে ভর্তি জেলা সদরের বাসিন্দা মর্জিনা বলেন, গত সোমবার জেলা হাসপাতালে সিজারে আমার সন্তান প্রসব হয়। শুক্রবার দিন ইন্টারী ডাক্তার ছুটি দিয়ে দেন। বাড়িতে যাওয়ার পর ইনফেকশান হয়ে যায়। তাই আবার ছুটে এসেছি হাসপাতালে। কয়েকবার চেষ্টা করেও ড্রেসিং করাতে পারিনি। রোগীদের স্বজনরা জানিয়েছেন গাইনী ওয়ার্ডের পোষ্ট ওপারেটিভ ওয়ার্ডে কোন বিশেষঞ্জ চিকিৎসক নেই। ইন্টারনী ডাক্তার দিয়েই চলছে ওয়ার্ডের সেবা।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও প্রতি শুক্রবার শহরের বেশ কয়েকটি চেম্বারে একাধিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রোগী দেখতে আসেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন সবারই জানা। এরপরও কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শূন্য পদগুলোতে পূরণ না করা রহস্যজনক।
কিশোরগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন ফারুকী বলেন, সঠিক ও আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কিশোরগঞ্জে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া জরুরি। আশা করি স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেবে।
পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগী জানান, নির্ধারিত চার শত টাকা ছাড়া রোগীর কোন কিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। বিষয়টি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে জানালে সরেজমিনে এসে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে দেড় হাজারসহ অন্য বিভাগে গড়ে সাড়ে পাঁচশ’ রোগীকে সামাল দিতে ২৮ জন চিকিৎসককে হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসক সংকট থাকায় বহির্বিভাগে অসংখ্য রোগী চিকিৎসা না নিয়েই চলে যান। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে। হাসপাতালের বেডের রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।