বাংলাদেশ রেলওয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন পিতা-পুত্র-কন্যা। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে নির্বাহী প্রকৌশলী ছাতক বাজার দপ্তরে কর্মরত, সপ্তাহ বা ১৫ দিনে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান তারা ব্যস্ত থাকেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্টান নিয়ে। ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল নূরকে মাঝে মধ্যে ছাতকে দেখা গেলেও তাহার ছেলে-মেয়েকে কর্মস্থলে খুজে পাওয়া যায় না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল নুরের পুত্র মাহবুবুল আলম ২০১৫ইং খালাসী পদে এসএসএই/কার্য্য/সিলেট অফিসে যোগদান করেন। ২০১৬ইং ছাতক বাজার এসএসএই/কার্য্য/বিআর অফিসে সেচ্ছায় বদলী হয়ে আসেন। ছাতকে স্থায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মরত না থাকলেও অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিতে মাহবুবুরকে (ভারপ্রাপ্ত) মটর ড্রাইভার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাতক রেলওয়েতে স্থায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মরত না থাকায় পুরো দপ্তর নিয়ন্ত্রন করেন অফিসের প্রধান সহকারী। আর প্রধান সহকারীকে ম্যানেজ করেই সপ্তাহ বা ১৫দিন পর প্রাইভেটকার গাড়ীতে চড়ে অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান তারা। সরকারী চাকুরীর নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে ব্যস্ত থাকেন মাহবুব এন্টারপ্রাইজ ও সিদ্দেক ট্রেডার্স নামের ব্যবসা প্রতিষ্টান নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর নুরকে প্রায় ৮বছর পূর্বে নানা অনিয়ম-দূর্র্ণীতির অভিযোগে ঢাকা অঞ্চলে বদলী করা হয়েছিল। পরবর্তীতে খালাসী ধেকে পদোন্নতি পেয়ে সিলেটে ওয়ার্ক সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৮সালে ভারপ্রাপ্ত এসএই/কার্য্য/বিআর ভোলাগঞ্জ হিসাবে ছাতক বাজারে যোগাদান করেন। ২০১৯ইং সালে ভারপ্রাপ্ত উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি নিয়ে ছাতক ও ভোলাগঞ্জের দায়িত্ব ভার গ্রহন করে ভোলাগঞ্জের পাথর চুরি করে বিক্রি, নদীর পার, বাসা-বাড়ী বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে।
গত জুলাই মাসে আব্দুন নুরের দপ্তরে কন্যা সুর্বনা আক্তার খালাসী পদে কাগজে-কলমে যোগদান করলেও নিজ দপ্তরে না এসেই নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। আব্দুন নুরকে মাঝে মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে দেখা গেলেও পুত্র মাহবুবুর ও কন্যা স্ববর্নাকে ছাতকে দেখা যায় না।
এদিকে, আব্দুর নুরের পূত্র মাহবুবুর আলম এক সময় ফেরী করে চা বিক্রি করত, পরবর্তীতে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কর্মরত ছিল। মাহবুবুর আলম রেলওয়ে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেই আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে যায়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে হয়ে যায় কোটিপতি। তার রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের ৫টি ইন্টাডিষ্টিক ট্রাক নং ঢাকা মেট্রো-ট ২০-০২০৩, ৩টি পিকাপ টি-১১-৬১৬৬, ১টি প্রাইভেট কার ঢাকা মেট্রো- গ ১১-২৭৬০ ও ১টি মটরসাইকেল সিলেট মেট্টো- খঅ ১১-১৬৮২। এছাড়া গ্রামের বাড়ীতে কোটি টাকা ব্যয়ে বাসা তৈরীর কাজ চলমান রয়েছে। রেলওয়ের সরকারী বাসা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে, তিনি থাকেন শীতাতপ নিয়নন্ত্রিত বিলাস বহুল প্রাইভেট বাসা ভাড়া করে। ২০১৮ইং সালে মাহবুবুরের অফিসে অনুপস্থিতি দেখে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী, কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে তার নামে এই ফরম ইস্যু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে প্রধান সহকারী ও বিল ক্লার্ক কর্মকর্তার অগোচরে তাকে পুরো মাসের বেতন-ভাতা উত্তোলন করার সুযোগ সুষ্টি করে দেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে বিভিন্ন ধরনের ভূয়া বিল, টিএলআর বিল তৈরী, কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের ছুটি, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, অবসরকালীন চুড়ান্ত নিস্পত্তির বিষয়ে টাকা ছাড়া ফাইল একচুলও নড়ে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিপূর্বে প্রধান সহকারী ও পিতা-পুত্র-কন্যার অনিয়ম-দূর্ণীতির অভিযোগের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী সিআরবি চট্টগ্রাম দপ্তরে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত, উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল নুর বলেন, আমার ছেলে মাহবুবুরের ব্যবসায় উন্নতি দেখে এক শ্রেনীর লোক হিংসা করে অপবাদ ছড়াচ্ছে। সরকারী চাকুরী করে ব্যবসা করা যায় কিনা জানতে চাইলে কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি।
মোঃ সুলতান আলী, ডিএন-২ ঢাকা, অতি: নির্বাহী প্রকৌশলী ছাতক বাজার বলেন, আমার কর্মচারীরা নিয়মিত ডিউটি করে আপনার কাছে প্রমান থাকলে শো-করেন।
পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম জোনের প্রধান প্রকৌশলী সুবক্ত গীনের মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।