বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অত্যাচারিত ভীত সন্ত্রস্ত হিন্দুদের জন্য ভারত তার উদার দরজা খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেরও উচিত ভারতের অত্যাচারিত ভীত সন্ত্রস্ত মুসলমানের জন্য নিজেদের দরজা খুলে দেওয়া।
ভালো হতো মানুষের সত্যিকার ধর্ম যদি মানবতা হতো। সব ধর্মের, সব জাতের , সব বর্ণের, সব শ্রেণীর মানুষ যদি মিলে মিশে সুখে শান্তিতে বাস করতে পারতো, সবার মধ্যে যদি সহমর্মিতা হৃদ্যতা থাকতো। কিন্তু বারবারই দেখছি ঘৃণা মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। অমানবতাই এখন ধর্মের অপর নাম। যারা ধর্মের উর্ধে উঠতে পেরেছে, তাদের মধ্যেই কিছুটা মানবতা দেখি। ধর্ম, ধর্মের রাজনীতি অরণ্যের আগুনের মতো বাড়ছে। একে রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ক্ষমতাহীন প্রভাব-প্রতাপহীন কিছু অসহায় নিরীহ মানুষ। আমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
দিল্লির দাংগাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে গত দুদিন মুসলমানরা ঘটিবাটি লেপ তোশক কাঁধে করে নিয়ে যখন পালাচ্ছিল, কেউ ওদের প্রশ্ন করেছিল, কোথায় যাচ্ছে তারা, তারা তখন জানে না কোথায় যাচ্ছে। ওরা যদি বাংলাদেশে বা পাকিস্তানে যেতে চায়, আমার তখন মনে হচ্ছিল, দরজা খুলে দেওয়া উচিত।
ধর্মের মতো হাস্যকর কল্পকথা দিয়ে দেশ ভাগ করা, মানুষ ভাগ করা খুব অন্যায়। কিন্তু আপাতত কিছু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা ভাবতেই পারি দরজা খোলার কথা। ধনী হিন্দু বা ধনী মুসলমান তো নিরাপত্তার জন্য ইওরোপ বা আমেরিকায় চলে যায়। তখন তো কেউ প্রশ্ন করে না কেন যাচ্ছে! গরিবের তো প্রতিবেশিই সম্বল। ধর্মের কৃত্রিম কাঁটাতার ডিঙিয়ে যাওয়া শুধু। আসলে তো একই মাটির মানুষ সবাই।
কোনও একদিন ধর্ম যখন জীবনের মূখ্য কোনও বিষয় থাকবে না, ধর্মের রাজনীতিরও জনপ্রিয়তা নষ্ট হবে, তখন এই উপমহাদেশ, এই দক্ষিণ এশিয়া এক হবে নিশ্চয়ই। মানুষের পরিচয় হবে তার মনুষ্যত্ব দিয়ে, ধর্ম দিয়ে নয়। সেদিন কবে আসে কে জানে। তার আগে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক, মৌলবাদ আর সন্ত্রাস বন্ধ হোক।
(তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)