কলকারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পরবর্তিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হবে। আজ রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান-এর সভাপতিত্বে সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
আলোচনা সভায় শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়। সরকার মালিক-শ্রমিক সবাইকে বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবেলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে কারখানায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। সভায় মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয় বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ক্রেতারা ইতোমধ্যে অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। এতে উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আহ্বানের দাবি জানান।
কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের মাঝে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কোন লক্ষণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে সভায় তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং সারাদেশের কারখানা পর্যায়ে এক লক্ষ পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। পরবর্তিতে পরিস্থিতি বিবেচনায় সার্বিক বিষয়ে সরকার মালিক-শ্রমিক আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় বিকেএমইএ-এর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি, আবদুস সালাম মুর্শিদী এমপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর-এর মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়, শ্রম অধিদপ্তর-এর মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন-এর সভাপতি কামরান টি রহমান, বিজিএমইএ-এর সভাপতি ড. রুবানা হক, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টুসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তাগণ, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেভিড-১৯ (করোনা) ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে সকল কারখানায় পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষত তৈরী পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত ও প্লাষ্টিক পণ্য শ্রমঘন শিল্পখাতের সকল কর্মীকে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিকপক্ষকে পত্রে অনুরোধ করা হয়। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি হলে এবং সর্দি, কাশি ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করে সংগনিরোধ (Quarantine) এর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, আইইডিসিআর কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় হাঁচি-কাশি দেয়া, করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম পরিহার করা সর্বোপরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়ে কর্মীগণকে উৎসাহিত করা এবং এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়।