কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে প্রবেশ করে মধ্যরাতে মারধরের পাশাপাশি তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি তার ওই সাজার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিতও করেছে আদালত।
সোমবার আরিফুলকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে রিটের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আরিফুল ইসলামকে সাজা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
এছাড়া কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (সুলতানা পারভীন), সহকারী কমিশনার (এসি) রিন্টু বিকাশ চাকমা, সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন ও সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করে আরিফুল থানায় যে অভিযোগ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টে বারের সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান আরিফুলকে সাজা প্রদানসংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেওয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেওয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো। এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?’
জবাবে আদালতের বিচারক বলেন, ‘আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।’
ইশরাত হাসান বলেন, ‘স্বীকারোক্তিতে আসামি আর তার বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেওয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কী অপরাধ তারও কোনো বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনো নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল এই বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়া দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসঙ্গে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি।’
গত ১৩ মার্চ নিউজপোর্টাল বাংরা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রামের প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়া হয়। অর্ধেক বোতল মদ ও ১০০ গ্রাম গাজা উদ্ধারের নামে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। তার আগে রিগ্যানকে অমানবিক নির্যাতন করে জেলা প্রশাসকের লোকজন। একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে এই সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন তারা। এ ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাহার করে সরকার। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।