মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সরকারের রাজস্ব আয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এছাড়া গত অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এ তথ্য প্রকাশের ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের নির্দেশে সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল (সিআইসি) প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী ইরিনা ভট্টাচার্যের ৮ বছরের ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাব তলব করেছে। একই দিন কর অঞ্চল-১ এর সার্কেল-১৪ থেকে তাদের আয়কর নথি তলব করা হয়।
ড. দেবপ্রিয় বর্তমানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক। এর আগে তিনি জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
জানতে চাইলে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ড আইনানুগ যা কর্তব্য মনে করেছে সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তবে এ অভিজ্ঞতা নতুন নয়। ২০০৩ সালেও অপছন্দনীয় কথা বলার জন্য বিএনপি সরকার একই ধরনের হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল। এনবিআরকে দিয়ে আমার ৬ বছরের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল। এমন হয়রানি নতুন নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব ঘাটতির তথ্য প্রকাশের কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক।
দেশের ৪৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার পাঠানো সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেলের সহকারী পরিচালক নাছির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী ইরিনা ভট্টাচার্য বা তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের একক বা যৌথ নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব, মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যে কোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যে কোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যে কোনো ধরনের সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যে কোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত থাকলে ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী ৭ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া তাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ তথ্য জানতে চেয়ে অপর চিঠিটি পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে।
চিঠিতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী ড. ইরিনা ভট্টাচার্য বা তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের একক বা যৌথ নামে যে কোনো বিও হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে ২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ বিবরণী জরুরি ভিত্তিতে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১১৩ (এফ) ধারার ক্ষমতাবলে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় রাজস্বের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি ও গোপনীয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১১৩ (এফ) বরাত দিয়ে দুটি চিঠিতে বলা হয়, আগে ছিল কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে- সেসব হিসাবেরও তথ্য দিতে হবে।
উপযুক্ত কারণ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাহিদাকৃত তথ্যগুলো সরবরাহে ব্যর্থ হলে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪(২) ধারা অনুযায়ী এককালীন ২৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা হারে জরিমানা দিতে হবে। পাশাপাশি একই অধ্যাদেশের ১৬৪ (সিসি) ধারা অনুযায়ী অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডের জন্য প্রসিকিউশন বা ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে।