মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানো এবং ভারতে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
আজ শুক্রবার সকালে কলকাতায় বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২০১৬ অনুষ্ঠানে ভারতের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি উত্তম স্থান। গার্মেন্টস, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং মাঝারি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রাচুর্যতা বাংলাদেশে যথেষ্ট রয়েছে। তাই বাংলাদেশে বিনিযোগ করুন।”
এ সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গত চার বছরের উন্নয়নের প্রশংসা করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সুসম্পর্কের কথাও তুলে ধরেন। বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য প্রসার ঘটবে।” দুই দিনের এ বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, জাপান, চীন, ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, ভূটানের শিল্পীপতি এবং সরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।
বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নীতীন জয়রাম গড়করি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভূ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ইউকের মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, বিহারের শিল্পমন্ত্রী জয় কুমার সিং, রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বেনী প্রমুখ বক্তব্য দেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও পৌর নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও অনুষ্ঠানে পশ্চিমবাংলার উন্নয়নের ক্ষতিয়ান তুলে ধরেন।
সভাপতির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, “ভারতের জাতীয় প্রবৃদ্ধির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ প্রায় দ্বিগুণ এগিয়ে রয়েছে। কৃষি থেকে শিল্প, কর আদায় থেকে অবকাঠামো উন্নয়নে খরচের চিত্রেও ভারতের জাতীয় চিত্রের চেয়ে বহু এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ।” পশ্চিমবঙ্গকে সাউথ ইস্ট এশিয়ার গেটওয়ে বলে আখ্যায়িত করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, “এখান থেকে বাংলাদেশ আধাঘণ্টা, সিঙ্গাপুর দুই ঘণ্টা, ভূটান-নেপাল ও আধা ঘণ্টার পথ। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জমি এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবাও রয়েছে। পাঁচ হাজার একর জমি শিল্পের জন্য তৈরি রয়েছে। এক লাখ একর জমি ল্যান্ড ব্যাঙ্কে মওজুদ রয়েছে।”
মমতা বলেন, “নির্বাচন আসছে। কিন্তু আমরাই আবার ক্ষমতায় আসবো। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ভয় নেই। বিনিয়োগ করুন।” গত তিন বছরে রিলায়েন্স গ্রুপ পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে। আগামী ২৪ মাসে রাজ্যের প্রত্যেক স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতালে হাইস্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন রিয়ালেন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানী। পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নীতীন গড়করি বাণিজ্য সম্মেলনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোনো সমস্যায় পাশে থাকবে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী কয়েক বছরে ছয় হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কথা বলেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, “১৯৯২ সালে মাদার তেরেসার সঙ্গে কাজ করতে কলকাতায় এসেছিলাম। এখন কলকাতা কতটা বদলে গেছে বুঝতে পারছি। বিনিয়োগের জন্য এই রাজ্য উত্তম জায়গা।”
কলকাতার বাইপাসের মিলন মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের ৪৭ জনের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ সম্মেলন শেষ হবে।