কিশোরগঞ্জের হাওরে মাঠে-ঘাটে-উঠানে সোনালি ধান। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চড়া মজুরি দিয়েও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক। অপরদিকে আগাম বন্যার আশঙ্কায় ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
এরই মধ্যে বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সুনামগঞ্জ হয়ে কিশোরগঞ্জে প্রবেশ করে উজানের পানি। ফলে চরম আশংকায় কৃষকদের চোখে ঘুম নেই। এ অবস্থায় পুরোপুরি পাকার আগেই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন চাল। গত বছর ধানের ন্যায্যদাম না পাওয়ায় এবার হাওরে অনাবাদী রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি।
কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, বাজিতপুর ও করিমগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা সবাই ধান কাটা, মাড়াই ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে স্থানীয় কৃষকেরা দলবেঁধে একে অন্যের ধান কেটে দিচ্ছেন। অনেক জায়গায় আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও দুঃসময়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তারাও স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
কৃষকরা বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় বাকী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক সংগ্রহের দাবি জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে জানান, আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পূর্বাভাস মাথায় রেখে আমরা কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে অনুরোধ করছি। ধানের ৮০ ভাগ শীষ পাকামাত্রই ধান যেন কেটে ফেলেন, সে জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাইরের জেলাগুলো থেকেও ধান কাটার জন্য নিরাপদে শ্রমিক আনা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে নিদিষ্ট সময়ের আগেই হাওরে ধান কাটা শেষ হবে।