প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়ায় হচ্ছে না দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত।
শুক্রবার (১৫ মে) দুপুরে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, এবার উন্মুক্ত স্থানে ঈদ জামাত পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। গত ১৪ মে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও এরকম নির্দেশনা এসেছে। সরকারি বিধি নিষেধ ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাই এবার লাখো মুসল্লির জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত আয়োজন করা হবে না। সে অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন মসজিদে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি বজায় রেখে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশের তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি একসঙ্গে শোলাকিয়ার বিশাল প্রান্তরে নামাজ পড়েন। এখানে একটি মাত্র জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল প্রান্তরে সব মুসল্লি যাতে নামাজ শুরুর মূহুর্তটি জানতে পারেন এ জন্য নামাজ শুরুর আগে বেশ কয়েকবার বন্দুকের গুলি ছোড়া হয়। সব শেষ জামাত শুরুর এক মিনিট আগে গুলি ছুড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি ঘোষণা করা হয়।
লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় নেয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা। বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে মাঠের চারপাশে। জামাত ঘিরে পুরো শহর যানবাহনশূন্য করে সাজানো হয় ট্রাফিকব্যবস্থা। আকাশে নজরদারি করে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ড্রোন। দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরববাজার থেকে চলাচল করে দু’টি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস।
জানা গেছে, বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপশালী বীর ঈশা খাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ করেন। তারও দু’শ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়াকফ দলিলে। ১৮২৮ সালে ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে এ মাঠে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।
২০১৬ সালের ১০ জুলাই ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হন বেশ কয়েকজন। তবুও থেমে থাকেনি ঈদের জামাত। তবে এবার সব আয়োজন থামিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য করোনা।