মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের বতর্মান চমৎকার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করে তিনি প্রতিবেশী দেশের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা আজ বিকেলে সপরিবারে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। খুব শিগ্রই তিনি তার দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। হর্ষ শ্রিংলা বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার নিযুক্ত হবার আগে থাইল্যান্ডে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
নয়াদিল্লিতে সম্প্রতি জিমখানা ক্লাবে বাসস-এর সাথে আলাপকালে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ককে যে কোনো সময়ের তুলনায় কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সকল বিষয়ে চমৎকার বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার সম্পর্ক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা যে কোনো দেশের প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে।
হর্ষবর্ধন বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব লাভের বিষয়টিকে তার কূটনৈতিক জীবনের একটি বড় ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই দায়িত্ব পাওয়ায় আমি অভিভূত। বাংলাদেশ ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী একটি দেশ। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তাই ভারতের যে কোন কূটনীতিকের জন্যই বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পদে নিযুক্ত হওয়ার বিশেষ আগ্রহ থাকে। আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত এবং এই দায়িত্ব পালনে আমার সকল সহযোগীদের নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
দার্জিলিং এলাকার অধিবাসী হর্ষবর্ধনের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। খুব ভাল বাংলা বলতে না পারলেও তিনি বাংলা ভাল বুঝতে পারেন।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই সফরের পর দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দুদেশের মধ্যকার ১৯৭৪ সালের সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। আর্থিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারতের শিল্পপতিদের জন্য বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত, ভারত নতুন করে বাংলাদেশের জন্য ভারতের ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা এবং সম্প্রতি নৌ-বাণিজ্য প্রটোকল বাস্তবায়ন এবং ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যানবাহন চলাচলের যে চুক্তি হয়েছে তা সহযোগিতার এ সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত স্থলসীমা ও সমুদ্র সীমা সমস্যার যে শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছে, তা বর্তমান বিশ্বে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে সকল সমস্যা এখনও অমিমাংসিত রয়েছে, তা সমাধানে আমার প্রচেষ্টা থাকবে।
ভিসা সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ উপকৃত হয় এমন কিছু করার জন্য তার সকল প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ বিভাগের যুগ্ম সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে বিভিন্ন উদ্যোগে তার সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের চেয়ে সমস্যা অনেক কমেছে। তিনি ভিসা প্রসঙ্গে বলেন, একমাত্র বাংলাদেশেই ভারতের হাইকমিশন দৈনিক প্রায় ৩ হাজার ভিসা দিয়ে থাকে। এটি একটি বিশাল কর্মকাণ্ড। তবে যে কোন ব্যবস্থারই উন্নতি করা সম্ভব।
ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহণকারী শ্রিংলা বাবার কর্মক্ষেত্র কলকাতায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।
বই পড়া, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং সিনেমা দেখাই তার আনন্দ। শ্রিংলা নয়াদিল্লীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিগত ৩২ বছরের কূটনৈতিক জীবনে প্যারিস, হ্যানয় ও তেল আবিবে ভারতের কূটনৈতিক মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনে কাউন্সেলর এবং ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কনসাল জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। – বাসস।