কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে সহজ সরল এক বুূদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী গণধর্ষণের অভিযোগে গত ৩০ জুন কুলিয়ারচর থানায় দায়ের করা মামলা নং ২১/১০৯ এর আসামী রবিন মিয়া (২৩) ও মামুন মিয়া (২৫) কে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বিজ্ঞ আদালত।
সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিআর (ভার্চুয়াল) আদালত নং -২ এ রিমান্ড শুনানী শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. আশিকুর রহমান প্রত্যেককে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল কুদ্দুস আসামীদের রিমান্ড নামঞ্জুর সহ জামিনের প্রার্থনা করিলে রাষ্ট্র পক্ষের সিএসআই মো. নূরুল ইসলাম আসামীদের জামিনের বিরোধীতা করে প্রত্যেককে ৫দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
এর আগে আসামীদের নাম ঠিকানা যাছাই বাচায় সহ মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার মামলার প্রধান আসামী রবিন মিয়াকে গ্রেফতার করে গত ২৪ জুন বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অপরদিকে দ্বিতীয় আসামী মামুন মিয়াকেও গ্রেফতার করে গত ২৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করেন। এরপর পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৯ জুন সোমবার দুপুরে আসামীদের রিমান্ড আবেদনের শুনানী হয়।
জানা যায়, গত ২২ জুন সোমবার সকাল ১১ টার দিকে কুলিয়ারচর পৌরসভা এলাকার দড়িবাগ মহল্লায় নিজ বাড়ীতে ‘‘পুলিশি হয়রানীর প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন’’ শেষে মামলার প্রধান আসামীর পিতা মো. হুমায়ুন কবির (৫৫) গত ২৩ জুন মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার দিকে তার ছেলে হৃদয় ইকবাল রবিন (২৩) কে কুলিয়ারচর থানায় নিয়ে আত্মসর্ম্পন করান। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদার পুলিশ পাঠিয়ে ভিক্টিমকে থানায় নিয়ে আসলে ধর্ষিতা নারী নিজে রবিনের পিতা, ভিক্টিমের মা, কুলিয়ারচর পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও এক সাংবাদিকসহ পুলিশ সদস্যদের সামনে আসামী রবিনকে ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করে। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় মামলার প্রধান আসামী রবিন মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপরদিকে গত ২৪ জুন বুধবার রাত ৮ টার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) আব্দুল হাই তালুকদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ভৈরব উপজেলার মিরারচর এলাকা থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেফতার করে। মামুন মিয়া কুলিয়ারচর পৌরসভার দড়িবাগ মহল্লার ইজ্জত আলীর ছেলে।
আসামীদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই তালুকদার বলেন, আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হবে। বাকী আসামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত রবিনের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, মামলার এজাহারে আসামির নাম মো. রবিন মিয়া (২৩), পিতার নাম মো.শামসু মিয়া, গ্রাম-মেরাতুলী। কিন্তু আমার ছেলের নাম হৃদয় ইকবাল রবিন (২৪), পিতার নাম মো. হুমায়ুন কবির, গ্রাম -দড়িবাগ। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। নামের কিছুটা মিল থাকায় ভূলবশত আমার ছেলেকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, কুলিয়ারচর পৌর এলাকার আশ্রবপুর মহল্লার এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (২০) নারীকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে গত ২৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে তার বাড়ীর পাশ্ববর্তী দোয়ারিয়া কুমারপাড়া শ্মশান ঘাটে নিয়ে ৩ যুবক জোর পূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ধর্ষিতা নারী বাদী হয়ে মো. রবিন মিয়া (২৩) কে প্রধান আসামী করে মামুন মিয়া (২৫) ও ইমন মিয়ার (২৪) নামে গত ৩০ জুন কুলিয়ারচর থানায় ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ৯(৩) ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২১/১০৯।