কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কুলিয়ারচর থানায় দায়ের করা মামলার বহু আলোচিত আসামী সেলিম মাষ্টারকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কুলিয়ারচর থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ ও মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম শুক্রবার (৩ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে নরসিংদী জেলার আমিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা একটি ভাড়াটিয়া বাসা থেকে সেলিম মাষ্টারকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতংকে মানুষ যখন দিশেহারা। তখনই সরকারি নির্দেশে সারা দেশে স্কুল-কলেজে পাঠদানসহ প্রাইভেট কোচিং-এ পড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ ঘোষণা করা হলেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে প্রাইভেট পড়ানোর অযুহাতে উপজেলার দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া (৪২) উপজেলার পূর্ব আব্দুল্লাপুরস্থ তার নিজ বাড়িতে একটি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়ানোর সময় তারই স্কুলের এক ৫ম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে। এমন অভিযোগে গত ১৭ জুন বুধবার স্কুল ছাত্রীর বাবা মো. আপেল মিয়া বাদী হয়ে সেলিম মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জনকে আসামি করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী-২০০৩ এর ১০ তৎসহ ৫০৬ দ.বি. ধারায় কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০৯। মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন মো. নিজাম উদ্দিন মেম্বার (৫০), মো. কামরুল হাসান (৪৫) ও এমাদ মিয়া (৩৫)।
ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুন মঙ্গলবার সকালে দড়িগাঁও গ্রামের মো. আপেল মিয়ার কন্যা দড়িগাঁও সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ৫ম শ্রেণির ছাত্রী (১১) প্রতিদিনের ন্যায় ওই সেলিম মাস্টারের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট রুমে সুযোগ বুঝে প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে। ওই দিন প্রাইভেট পড়ার শেষে ওই স্কুল ছাত্রী বাড়িতে এসে কান্না-কাটি করে তার মায়ের নিকট এ ঘটনা খুলে বলে।
এরপর বিষয়টি দড়িগাঁও এলাকায় জানা-জানি হলে এলাকাবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় তোলপার শুরু হয়। এ নিয়ে এলাকার যুব সমাজ সেলিম মাস্টারের বিচার দাবীতে ১৫ জুন সোমবার রাত ৭টার দিকে স্থানীয় মুজরাই মোড় বাজার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এরপর গত ১৭ জুন বুধবার সকাল ১০টার দিকে সেলিম মাস্টারের বিচারের দাবীতে দড়িগাঁও
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসী একটি মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এছাড়া গত ২৬ জুন শুক্রবার সকালে উপজেলার সালুয়া ফাজিল মাদ্রাসার সামনে বেলাব-ডুমরাকান্দা রাস্তায় স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ফ্রেন্ডস ক্লাবের উদ্যোগে ঘন্টাব্যাপী এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা পুলিশকে দোষারোপ করে বলেন, রহস্যজনক কারনে বহুল আলোচিত আসামী সেলিম মাষ্টারকে গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। এ বক্তব্যসহ মানববন্ধনের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। অবশেষে শুক্রবার (৩ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে সেলিম মাষ্টারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সেলিম মাষ্টারকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল হাই তালুকদার বলেন, শনিবার (৪ জুলাই) দুপুরে মাননীয় কিশোরগঞ্জ জেলা আদালতের মাধ্যমে প্রধান আসামী সেলিম মাষ্টারকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার আসামী দড়িগাঁও গ্রামের বর্তমান মেম্বার নিজাম উদ্দিন, দড়িগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. কামরুল হাসান ও দপ্তরী এমাদ মিয়া স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদর্শন করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।