এনআরবি ব্যাংকের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চিকিৎসাসেবার নামে জালিয়াতিতে আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক।
মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছেন- রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইব্রাহিম খলিল, এনআরবি ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের এসএমই ব্যাংকিং শাখার সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার সোহানুর রহমান এবং একই ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক পরিচালক জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব ভট্টাচার্য।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে এনআরবি ব্যাংক থেকে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সুদসহ ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ টাকা আত্মসাৎ করেন। রিজেন্ট হাসপাতালের চলতি হিসাব খোলার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা জমা নেওয়া হয়নি। সাহেদ ব্যাংকটির নতুন গ্রাহক ছিলেন। তিনি হিসাব খোলার এক দিন আগেই ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল অফিসার সোহানুর রহমান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াহিদ বিন আহমেদ এসএমই ব্যাংকিং ঋণ মঞ্জুরির জন্য সুপারিশ করেন।
ঋণ মঞ্জুরির আগপর্যন্ত ওই হিসাবে কোনো লেনদেন ছিল না। সাহেদের হাসপাতাল ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। অন্য কোনো ব্যাংকে বা অন্য কোনো ব্যবসায় সাহেদের কী ধরনের বিনিয়োগ বা লেনদেন ছিল সে সম্পর্কে কোনো তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
ঋণের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জামানতও গ্রহণ করা হয়নি। ঋণ বিতরণের আগে বা পরে তদারকি করা হয়নি। গ্রাহকের ব্যবসায়িক সুনাম, ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়নি। ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি। সাহেদ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী এফডিআর করেছিলেন।
সাহেদ ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তার ওই এফডিআর ক্লোজ করে ঋণ সমন্বয় করে। এতে দেখা যায়, সাহেদ স্বেচ্ছায় কখনো ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্য ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের জন্য দুটি টার্ম লোনে ২ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি নিশ্চিত হয়ে ১ কোটি টাকা এফডিআর করেন।
সাহেদসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এনআরবি ব্যাংকে দুটি টার্ম ঋণ রিশিডিউলসহ ২ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৭ টাকা ঋণ বিতরণ ও গ্রহণ করেছেন। এ সময়ে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ২২৭ টাকা সুদ ও অন্যান্য চার্জ ধার্য করা হয়েছে।
ওই সময়ের মধ্যে লিয়েনকৃত সাহেদের এফডিআর থেকে ১ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৯ টাকা সমন্বয় করা হয়। অবশিষ্ট ব্যাংকের ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে র্যাবের অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়ার পর সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।