মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকমঃ
দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির শিক্ষক নেতারা সাধারণ সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যালোচনা সভার পর তারা এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বৈঠকে বসেন শিক্ষক নেতারা । বৈঠক শেষ হয় সাড়ে ৬টায়।
অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বুধবার থেকে ক্লাস শুরু হবে। তবে কর্মবিরতি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে স্থগিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও কর্মবিরতি পুরোপুরি প্রত্যাহার না করার কারণ জানতে চাইলে এই শিক্ষক নেতা আমলাতান্তিক জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, আমলাতান্তিক জটিলতায় যাতে আমাদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসের বাস্তবায়ন পিছিয়ে না যায়।
এর আগে ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদসহ ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠকের প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ক্লাস বন্ধ থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসময় শিক্ষক নেতারা বাড়তি ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কিছু দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।
বৈঠকে পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সদস্য ড. মো. নিজামুল হক ভুইয়া বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-২ এবং গ্রেড-২ থেকে গ্রেড-১ এ উন্নীত করার বিষয়ে যে প্রস্তাবনা ছিল তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সুপারগ্রেড অর্থাৎ গ্রেড-১ থেকে কিছু সংখ্যক (৫ শতাংশ) শিক্ষককে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা প্রদানের যে প্রস্তাবনা রয়েছে তার ব্যাপারে কোনো সমাধান আসেনি।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, এই মুহূর্তে প্রত্যাহার নয়। সাধারণ সভার করে কর্মবিরতি স্থগিত করার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, অষ্টম বেতনকাঠামোর চূড়ান্ত ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করেন তাদের মর্যাদা রক্ষা হয়নি এ অভিযোগ করে। বেতনকাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর তারা জোর আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষকরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করার বিরোধিতা করে আসছিলেন। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ সচিবদের সমান গ্রেডে উন্নীত না হওয়ার সুযোগ না থাকাকে মর্যাদাহানি হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। তখন শিক্ষকদের দাবি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১০ দিন পর প্রকাশিত গেজেটে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি বলেন অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা।
মঙ্গলবারের সভার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাসের বিষয়টি তারা তুলে ধরেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বৈঠক থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতি আমরা আস্থাশীল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সেই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে আমাদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনকে আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের উদ্দেশে ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, ‘যে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের আন্দোলন স্থগিত করেছি, নেতারা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের গিয়ে শিক্ষকদের তা অবহিত করবেন।’