মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকমঃ
ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশন ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশের বাধা ও দুই কর্মীকে আটকের প্রতিবাদে শাহবাগে গণসমাবেশ আহ্বান করেছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ। বুধবার বিকালে হাই কমিশন ঘেরাও করতে গিয়ে রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এলাকায় পুলিশের বাধা ও দুজনকে আটকের পর সেখানেই অব্স্থান নিয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনটির মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
আগামী শুক্রবার বেলা ৩টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হবে জানিয়ে সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান ইমরান এইচ সরকার।
এর আগে একাত্তরের গণহত্যা অস্বীকারসহ কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বুধবার বেলা ৩টার দিকে মঞ্চের নেতাকর্মীরা গুলশান ২ নম্বর এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে হাই কমিশনের দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও ২ নম্বর গোল চত্বর এলাকায় দাঁড়াতেই পারেননি তারা। কর্মসূচি শুরুর আগেই পাকিস্তান হাই কমিশনের দিকের সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ এবং আটক করা হয় সোহেল ও রিয়াদ নামে গণজাগরণ মঞ্চের দুই কর্মীকে। এরপরে সোয়া ৩টার দিকে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ চার-পাঁচজন নেতাকর্মী ব্যারিকেডের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে ফিরিয়ে আনে।
পরে তারা কামাল আতাতুর্ক সড়কের দিকে পূবালী ব্যাংকের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলশান উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের গলি থেকে মঞ্চের বেশ কিছু নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পুলিশ ঘেরাওয়ের মধ্যে অবস্থান ও সমাবেশ করেন তারা। এরপরে পুলিশ সেখান থেকে তাদের ধাওয়া করে কনকর্ড বকশ টাওয়ার গলি পার করে দেয়। এই সময় তাদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
পুলিশের ধাওয়ার আগে অবস্থান কর্মসূচিতে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান যেভাবে আমাদের ত্রিশ লক্ষ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, আমাদের ওপর চালানো গণহত্যাকে অস্বীকার করেছে, যেভাবে জঙ্গি মদদ দিচ্ছে ও বাংলাদেশের ভেতরে থেকে কূটনৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দেশকে অস্থিতিশীল করবার চেষ্টা করছে- তার প্রতিবাদ জানানো।
ইমরান বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, পাকিস্তান যে গণহত্যা করেছিল তার দায় স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, পাকিস্তানকে ১৯৫ জন মিলিটারি যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ট্রেজারি থেকে নিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে।
তিনি বলেন, কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া বহিষ্কারের জন্য পাকিস্তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ আর করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
ইমরান এইচ সরকার বলেন, এদেশকে অস্থিতিশীল ও জঙ্গিবাদের আখড়া করার চেষ্টা করছে। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় আজকের কর্মসূচি।
পাকিস্তান হাই কমিশন বাংলাদেশে রেখে জঙ্গিবাদ দমন করা কোনোভাবে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে ইমরান বলেন, আপনারা রাত দিন পরিশ্রম করে জঙ্গিবাদ দমনের যে চেষ্টা করছেন, সেই জঙ্গিবাদের আখড়া হচ্ছে এই হাই কমিশন। এটা বাংলাদেশের একট শিশু পর্যন্ত জানে। তিনি আরো বলেন, আপনারা একদিকে জঙ্গিবাদের ঘাটিকে পাহারা দেবেন, অন্যদিকে জঙ্গি দমন করবেন সেটা কীভাবে সম্ভব? জঙ্গিবাদ দমন করতে হলে বাংলাদেশ থেকে এই পাকিস্তান হাই-কমিশনকে সরাতে হবে।
লেখক-প্রকাশক হত্যা, বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিবাদী হামলা পাকিস্তান দূতাবাসের অর্থায়নেই হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা এই মঞ্চের মুখপাত্র।
ভারতের কূটনীতিক দেবযানীকে অন্যায়ভাবে তল্লাশি করার জেরে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সরকারের উদ্দেশ্যে ইমরান বলেন, “পাকিস্তান অন্যায়ভাবে কূটনীতিক বহিষ্কার করবে আর আপনারা তামাশা দেখবেন, মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকবেন, তা হতে পারে না। মৌসুমী রহমানকে বহিষ্কারের সমুচিত জবাব আপনাদেরকে দিতে হবে”
দেশকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য দেশে পরিণত করার স্বার্থে পাকিস্তান হাই-কমিশন ঘেরাওয়ে এসেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনারা আজ বাধা দেবেন আমরা তিনদিন পর আবার আসবো। ওইদিন বাধা দেবেন আবার আসবো। যারা জঙ্গিবাদের টাকা দেয়, তাদের লালন-পালন করে তাদের পাহারা দিয়ে রাখা বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে নিরাপদ বাসযোগ্য করাই হবে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্ব।
পরবর্তীতে গুলশান-৮ এর সামনে পুলিশি ঘেরাওয়ের মধ্যে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে কর্মসূচি শেষ করে গণজাগরণ মঞ্চ। কর্মসূচিতে মঞ্চের নেতাকর্মীরা ‘জঙ্গিবাদের আখড়া/ ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘জঙ্গিবাদের আস্তানা/ বাংলাদেশে থাকবে না’, ‘ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও হবে/ পাকিস্তান হাই কমিশন ঘেরাও হবে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। এমনকি ‘পাওনা টাকা ফেরত দাও, নইলে বাংলা ছেড়ে যাও’, ‘গো ব্যাক পাকিস্তান’ প্রভৃতি লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন তারা।
এদিকে কর্মসূচিতে বাধার বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেননি গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ খান। তবে তিনি কূটনীতিক পাড়ার নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাক বলেন, এই এলাকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা বসানোসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।