মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকমঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতি অদম্য জাতি। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল।
বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের উন্নয়ন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা দেশের উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন করেছি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, সিলেট বিভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অহরহ বোমা হামলা হতো। সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময় বিদেশিরাও নিরাপদ ছিল না। সিলেটে শাহজালালের (র.) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপরও হামলা হয়েছিল।
বিএনপি-জামায়াতের আমল ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের আমল, এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের আমল হচ্ছে উন্নয়ন ও সুশাসনের আমল।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষান্ত দেয়নি। তারা নির্বাচন বানচালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদার প্রতিহিংসা থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পায়নি।
‘তাদের ক্ষমা নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেখানে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেখানেই মামলা হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার দায়ে তাদের সবার বিচার হবে। প্রত্যেকের বিচার করা হবে।
বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই আর তারা চায় অশান্তি।
‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। জাতির জনকের হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু আমরা জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধারপরাধীদেরও বিচার আমরা করবো। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমানে লুটপাট করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান ছিল মরা লাশ। আমরা বিমানে প্রাণের সঞ্চার করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছি। আমরা চাই গরীব মানুষ যাতে কষ্ট না পায়।
তিনি বলেন, আমরা ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু করেছি। আট হাজার পোস্ট অফিস ডিজিটাল করেছি। এসবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমরা দেশের সর্বত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। দেশের কেউ বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াবে না।
সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কোনো সরকারের আমলে এমনটা হয়নি।
শিক্ষা খাতে সরকার উন্নয়ন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। বিনামূলে মাধ্যমিক পর্যন্ত বই দিচ্ছি। এখন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে যায়।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য দেশে শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। আমরা নার্সদের চাকুরির মান উন্নত করেছি। দেশে ১২ হাজার নতুন চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরো ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হবে।
শিক্ষা, যোগাযোগ, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে বর্তমান সরকার উন্নয়ন করছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবে।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের যৌথ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে জনসভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভাপতির বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।